আইন-শৃঙ্খলা অবনতিতে ঝুঁকির মুখে ব্যবসা দাবি ব্যবসায়ীদের

ঢাকা অফিস | May 22, 2025

দেশজুড়ে চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই ও পণ্য ছিনতাইয়ের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলার ক্রমাবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা। বুধবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর আয়োজিত এক আলোচনাসভায় তারা বলেন, গত আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর পরিস্থিতির উন্নতির যে আশা জাগিয়েছিল, বাস্তবে তা ভেঙে গেছে। বরং বর্তমানে ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, ব্যবসার পরিবেশ এখন সম্পূর্ণরূপে অনিরাপদ। চাঁদাবাজি, অনলাইন প্রতারণা, পরিবহন ঝুঁকি, জালিয়াতি ও সাইবার হুমকির কারণে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে এবং অনেক উদ্যোক্তা স্থায়ীভাবে আস্থা হারাচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, গার্মেন্টস খাতে কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুত পুলিশি সহায়তা মেলে, কিন্তু ৫০ থেকে ১০০ জন কর্মী নিয়োজিত ছোট-মাঝারি উদ্যোক্তারা সেভাবে সহযোগিতা পান না।

বাংলাদেশ পালস ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নেছার উদ্দিন খান জানান, কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, “স্কুল পড়ুয়া ছেলেদের দিয়েও এখন চাঁদাবাজি চলছে। পুলিশকে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”

বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, এখন সব ট্রাকই স্থলবন্দরে দালালদের মাধ্যমে ভাড়া করতে হয়, যেখানে প্রতিটিতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে। তিনি চুরি ও ডাকাতির আশঙ্কা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে পুলিশি নিরাপত্তার দাবি জানান।

সাবেক ডিসিসিআই ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুস সালাম বলেন, “আমরা নিয়মিত কর দিই, তবুও এখন এক আতঙ্কের মধ্যে ব্যবসা করতে হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, রাতে মানুষ এখন নিজ ঘরেও নিরাপদ নয়। হাইওয়েতে ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনাও বেড়েছে। মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লুৎফর রহমান বাবু অভিযোগ করেন, এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজি এখন প্রকাশ্যে হচ্ছে, কিন্তু পুলিশ কোনো কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না।

বাংলাদেশ মনিহারি মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হাজী ফয়জুদ্দিন বলেন, মহাসড়কের অবৈধ দখলের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, যা পণ্য পরিবহনে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করছে।

মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মোহাইমেনুল ইসলাম স্বীকার করেন যে, গত ৫ আগস্টের পর কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে এখনও ব্যবসার উপযোগী নিরাপদ পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। তিনি বলেন, “টিনএজ ও ইয়ুথ গ্যাং নির্মূলে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।”

আলোচনায় ব্যবসায়ীরা চিনি ও তেলের বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ এবং কিছু বড় কোম্পানির আধিপত্য নিয়েও অভিযোগ তুলেন। তারা বলেন, চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ বন্ধ হওয়ার পর কোম্পানির সংখ্যা কমে তিনটিতে নেমে এসেছে, ফলে বাজারে প্রতিযোগিতা কমে গেছে।

আসন্ন ঈদ-উল-আজহাকে সামনে রেখে পশুবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগেও আলোচনা হয়। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন জানান, বিশেষ করে পশু পরিবহনে চাঁদাবাজি রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চাওয়া হয়েছে এবং একটি হটলাইন ও বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে।

একই দিন প্রধানমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুস তার বাসভবনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন, যেখানে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।