মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বুধবার এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ফোনালাপ করেছেন, যা ট্রাম্প নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন। এই ফোনালাপের একদিন আগে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও আলোচনা করেন। খবর: এপি
ট্রাম্প জানান, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনতে তিনি দুই দেশের চাহিদা ও শর্তাবলী সমন্বয় করার চেষ্টা করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সঠিক পথেই আছি,’ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজ শিগগিরই আলোচনার বিস্তারিত জানাবেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার সময় পুতিন ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু না করার প্রতিশ্রুতি দিলেও ৩০ দিনের পূর্ণ যুদ্ধবিরতি মানতে রাজি হননি। তবে জেলেনস্কি এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘পুতিন বলেছেন যে তিনি ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা বন্ধ রাখবেন, কিন্তু গত রাতেই ১৫০টি ড্রোন হামলা হয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলো জ্বালানি স্থাপনা লক্ষ্য করেই পরিচালিত হয়েছে।’
ক্রেমলিন দাবি করেছে যে তারা ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনায় হামলা বন্ধ রেখেছে, কিন্তু ইউক্রেন তাদের চুক্তির শর্ত মানছে না। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কিয়েভ প্রশাসন আপাতত কোনো পারস্পরিক সমঝোতায় যেতে রাজি নয়।’
হোয়াইট হাউস ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপকে ‘শান্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন আশা করছে যে ভবিষ্যতে কৃষ্ণসাগরে সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে এবং তা ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে রূপ নেবে। কিন্তু পুতিন এখনও তার কঠোর শর্ত থেকে সরে আসেননি, যা কিয়েভ কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব্ব আলোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন, তবে তিনি বলেছেন, ‘শান্তি আলোচনায় কোনো শর্ত থাকতে পারে না। ইউক্রেন শর্ত ছাড়াই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। এখন রাশিয়াকে এটি মেনে নিতে হবে।’
ট্রাম্প প্রশাসন এবং রাশিয়ার কর্মকর্তারা আগামী সপ্তাহে সৌদি আরবের রিয়াদে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেখানে আংশিক যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের ব্যাপারে আলোচনা হবে। তবে ইউক্রেন সেই আলোচনায় অংশ নেবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এদিকে, মঙ্গলবার ট্রাম্প-পুতিনের ফোনালাপের পরপরই কিয়েভে বিমান হামলার সাইরেন বাজে এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল, রেলস্টেশন এবং বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সময়ে, রাশিয়া দাবি করেছে যে ইউক্রেন তাদের ক্রাসনোদার অঞ্চলের জ্বালানি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
জেলেনস্কি স্পষ্ট করেছেন যে তিনি রাশিয়ার প্রধান শর্ত মেনে নেবেন না, বিশেষ করে পশ্চিমা সমর্থন বন্ধের বিষয়ে। তিনি বলেন, ‘যদি আমাদের প্রতিরক্ষা সহায়তা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ আরও বড় বিপদের মুখে পড়বে। বরং আমাদের আরও বেশি সহায়তা দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় লাল দাগ হলো আমাদের দখলকৃত ভূখণ্ডকে রাশিয়ার বলে স্বীকৃতি দেওয়া। আমরা কখনোই এটি মেনে নেব না।’
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে ব্যবহার করে ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চান। রাশিয়ার সামরিক বিশ্লেষক নাইজেল গোল্ড-ডেভিস বলেছেন, ‘এটি স্পষ্ট যে পুতিন সরাসরি যুদ্ধবিরতি মানতে চান না, তবে তিনি ট্রাম্পের চাপে সরাসরি না-ও বলতে পারছেন না। তাই তিনি আলোচনাকে দীর্ঘায়িত করতে চাইবেন।’
বিশ্ব রাজনীতিতে এই আলোচনা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি নির্ভর করছে উভয় পক্ষের বাস্তব পদক্ষেপের ওপর।