ঢাকা অফিস: রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আরিফুল ইসলাম (৩০) নামের এক জাপান প্রবাসীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, তাকে হত্যা করেছেন পারভীন আক্তার নামের একজন নারী। তিনি কানাডা প্রবাসী। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বুকে ও গলায় ছুরিকাঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। লাশ পচে-গলে গেছে।
গত ১৭ মে তারা দুইজন ভাটারা থানার মাটি প্রপার্টিজ নামে অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। ১৫ দিন পর ওই বাসা থেকে আরিফুলের লাশ উদ্ধার করা হলো।
তাদের ওখানে দেয়া তথ্য ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলেছে, ১৭ মে বিকেল ৪টার দিকে ওই অ্যাপার্টমেন্টে ওঠেন আরিফুল ও পারভীন। সাতদিনের ভাড়া বাবদ অগ্রিম ১৩ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। পরদিন সকাল ৬টা ৩১ মিনিটে পারভীন একাই সেখান থেকে বেরিয়ে যান। আর শনিবার আরিফুলের লাশ উদ্ধার করা হয়।
পারভীনের পাসপোর্ট ও ভ্রমণের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনি গত ১৬ মে কানাডা থেকে বাংলাদেশে আসেন। ১৮ মে তিনি আবার কানাডায় চলে যান। তার মুঠোফোন নম্বরের সর্বশেষ অবস্থান শনাক্ত হয়েছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে।
পুলিশের গুলশান বিভাগের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, গত শনিবার ফোন করে দোতলার অ্যাপার্টমেন্টে একজনের লাশ পাওয়ার তথ্য জানানো হয়। তখন পুলিশ সেখানে গিয়ে পচাগলা অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে। লাশের বুক ও গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। এ ঘটনায় রবিবার ভাটারা থানায় একটি মামলা করেছেন নিহত আরিফুলের বড় বোন সাফরিজা আক্তার।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, আরিফুল ইসলামের বয়স ২৭ বছর। আর পারভীন আক্তারের বয়স ৩৩ বছর। পারভীন গত এপ্রিল মাসে কানাডায় তার স্বামীর কাছে যান। আরিফুল, পারভীন ও পারভীনের স্বামী নাজমুল হোসেন সবাই নরসিংদী জেলার বাসিন্দা। একই জেলার বাসিন্দা হওয়ায় তারা একে অপরকে চিনতেন। আরিফুল জাপানে তার স্ত্রীর সঙ্গে এবং পারভীন কানাডায় তার স্বামীর সঙ্গে থাকলেও তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিলো। আরিফুল নরসিংদীর রায়পুরা থানার আদিয়াবাদ কালিকুরপাড়া এলাকার শাহজাহান শিকদারের ছেলে। পারভীন নরসিংদী সদরের সাটিরপাড়া এলাকার নুরুল ইসলামের মেয়ে।
পুলিশের ভাষ্যমতে, আরিফুলের লাশ উদ্ধারের পর শনিবার পারভীনের বাবা মেয়ের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, তুমি এখন কোথায় অবস্থান করছ?’ জবাবে পারভীন আক্তার বলেন, জানো না যে আমি কানাডাতে আছি? এরপর পারভীন আক্তারের বাবা পাল্টা জিজ্ঞাসা করেন, তুমি নাকি দেশে এসেছিলে?’ তখনই পারভীন আক্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং অফলাইনে চলে যান।
পুলিশের গুলশান বিভাগের ভাটারা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) রাজন কুমার সাহা বলেন, এখনো পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের মনে হয়েছে, পারভীন আক্তার দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকে আরিফুলকে হত্যা করেছেন। বিশেষ করে, সিসিটিভি ফুটেজ, মুঠোফোন নম্বরের কথোপকথন বিশ্লেষণ করে ধারণা করা যাচ্ছে যে পারভীন আক্তারকে আরিফুল মানসিক নির্যাতন করেছেন। সেই ক্ষোভ থেকেই তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারেন।
তবে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার যে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আরিফুলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে আরিফুল ও পারভীন আক্তারের বিয়ের একটি নোটারি হলফনামা পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। হলফনামায় দেখা যায়, তারা ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিয়ে করেন। তবে আরিফুলের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তারা এ বিয়ের বিষয়ে জানতেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার রিফাত রহমান শামীম রবিবার গণমাধ্যমকে বলেন, যেহেতু অভিযুক্ত পারভীন আক্তার কানাডায় চলে গেছেন, সেহেতু পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহায়তায় ইন্টারপোলে চিঠি দেয়া হবে।
স্বাআলো/এস