ঢাবির মর্যাদা রক্ষায় ন্যায়বিচার ও দায়িত্বজ্ঞান জরুরি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়—বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র, গণতন্ত্র ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার অভয়ারণ্য হিসেবে বিবেচিত। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই প্রতিষ্ঠান বারবার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে, এবং দেশের সংকটময় মুহূর্তে বারবার পথ দেখিয়েছে জাতিকে। অথচ, সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ছাত্রদল নেতা সালেহীন সাম্য হত্যাকাণ্ড প্রশ্ন তোলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ববোধ, নৈতিকতা ও সক্ষমতা নিয়ে।
একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা ক্যাম্পাসে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হলেন। এই ঘটনার পর সর্বস্তরে ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করছে—ঢাবি প্রশাসন কীভাবে এই ঘটনা ঠেকাতে ব্যর্থ হলো? উপাচার্য ও প্রক্টর কীভাবে চোখ বন্ধ করে রাখলেন যখন ক্যাম্পাসে একের পর এক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে?
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কোনো শিক্ষার্থী যেন ভিন্নমত পোষণের কারণে প্রাণ হারায়, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি শুধু একটি খুন নয়, বরং এটি শিক্ষার পরিবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত।
দায়িত্বে থেকে যারা ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের পদত্যাগ করা উচিত—এটাই নৈতিকতা। উপাচার্য এবং প্রক্টরের পদত্যাগ কোনো রাজনৈতিক দাবি নয়, বরং এটি দায় স্বীকারের একটি প্রতীকী পদক্ষেপ হতে পারে, যা ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর বার্তা দিতে পারে।
সালেহীন সাম্য হত্যার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এই মুহূর্তে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলেরও প্রত্যাশা। কোন প্রভাবশালী গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক চাপের কারণে যেন এই তদন্ত ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
একইসঙ্গে ক্যাম্পাস রাজনীতিকে সহনশীল, গণতান্ত্রিক ও সহাবস্থানের ভিত্তিতে পরিচালনার জন্য কার্যকর নীতিমালা ও প্রশাসনিক সংস্কার প্রয়োজন। মতবিরোধ থাকবে, মতপার্থক্য থাকবে—কিন্তু জীবন যাবে না।
এই হত্যাকাণ্ড আমাদের সবাইকে একটি আত্মজিজ্ঞাসার মুখে দাঁড় করিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, শিক্ষক সমাজ এবং আমরা—সবাইকে ভাবতে হবে, আমরা কোথায় যাচ্ছি? ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা ও মানবিক মূল্যবোধ যদি ঢাবির মতো প্রতিষ্ঠানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে দেশের ভবিষ্যৎও সংকটে পড়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় এখনই সময়, প্রশাসনিক দায়-দায়িত্বের সৎ পর্যালোচনা ও পদক্ষেপ নেওয়ার।