মোংলা বন্দর সম্প্রসারণে চীনা ঋণ আসছে

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি | June 8, 2025

মোংলা বন্দর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের সহায়তা নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ইতোমধ্যে প্রকল্পের জন্য চীনের কাছ থেকে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রায় ৪ হাজার ৬৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। মোংলা বন্দরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ঋণের আবেদনের প্রস্তাব নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, চীন এই প্রকল্পে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং গত মার্চে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের সময় বিষয়টি নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। চীনা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘মোংলা বন্দর নিয়ে চীন অনেকদিন ধরেই আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।’

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বন্দরের বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা ২০ ফুটের সমমানের প্রায় ৪ লাখ কনটেইনারে উন্নীত হবে। পাশাপাশি সৃষ্টি হবে বহু নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও কৌশলগত গুরুত্ব

মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন নিয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা নতুন নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই প্রকল্পটি চীনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ছিল প্রায় চূড়ান্ত। তবে ভারতের আপত্তির কারণে তখন বিষয়টি স্থগিত হয়ে যায়।

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে চীন আবারও আলোচনায় সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং অবশেষে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়।

এ বিষয়ে সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘যেকোনও দেশের জন্য একটি সমুদ্রবন্দর কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মোংলা বন্দরে চীনের সম্পৃক্ততা ভারতকে কিছুটা উদ্বিগ্ন করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি চীনের বদলে অন্য কোনও দেশ এই প্রকল্পে সহায়তা করতো, তাহলে হয়তো দিল্লির আপত্তি থাকতো না। তবে এটি আমাদের জাতীয় স্বার্থের বিষয় এবং জনগণের মধ্যে এ নিয়ে আরও আলোচনা হওয়া জরুরি।’

চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে জনগণের আগ্রহের তুলনায় মোংলা বন্দর নিয়ে আগ্রহ কম থাকার কারণ হিসেবে তিনি জানান, দেশের বেশিরভাগ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম এখনো চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক। তবে মোংলা বন্দরের উন্নয়ন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে তিনি মনে করেন।

প্রকল্পের কাঠামো ও বাস্তবায়নকাল

মোংলা বন্দরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি নতুন কনটেইনার জেটি নির্মাণ করা হবে। এছাড়া একটি লোডেড কনটেইনার ইয়ার্ড, একটি খালি কনটেইনার ইয়ার্ড এবং একটি বিপজ্জনক কার্গো হ্যান্ডলিং ইয়ার্ড নির্মিত হবে।

সরঞ্জামের মধ্যে থাকবে চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন, সাতটি রাবার-টাইর্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন (RTG) এবং আরও ৪৪টি বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক বন্দর সরঞ্জাম।

প্রকল্পটি ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।