রেমিটেন্সে রেকর্ড গড়লেও শ্রমিক পাঠানোয় ভাটা

ঢাকা অফিস ঢাকা অফিস | May 22, 2025

দেশে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ রেকর্ড গড়লেও বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভাটা দেখা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ—এই ৯ মাসে দেশে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২ হাজার ১৭৮ কোটি মার্কিন ডলার। আগের বছরের তুলনায় এই সময়ে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি ফিরেছে, দেশে অর্থনীতিও কিছুটা প্রাণ পাচ্ছে।

কিন্তু এই সাফল্যের বিপরীতে আছে এক গুরুতর সংকট—বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর হার কমে যাচ্ছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যেখানে বিদেশে গিয়েছেন ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন, সেখানে ২০২৪ সালে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৬৯ জনে। অর্থাৎ এক বছরে প্রায় ২২ শতাংশ কম কর্মী গেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। মালয়েশিয়া ২০২৩ সালে ৩ লাখ ৫১ হাজার কর্মী নিলেও ২০২৪ সালের মে মাস থেকে দেশটি বাংলাদেশ থেকে নতুন করে কর্মী নেওয়া স্থগিত করেছে। ওমানে ২০২৩ সালে গিয়েছিল ১ লাখ ২৭ হাজারের বেশি কর্মী, অথচ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ২৪ জন কর্মী সেখানে গেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালদ্বীপ, মরিশাস ও বাহরাইনেও নতুন কর্মী নেওয়া একপ্রকার স্থবির।

বর্তমানে বাংলাদেশি কর্মীদের সবচেয়ে বড় গন্তব্য সৌদি আরব। ২০২৪ সালে ৬ লাখ ২৮ হাজার কর্মী গেছেন দেশটিতে। তবে অনেকেই সেখানে গিয়ে চাকরি পাচ্ছেন না, অথবা মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। ভিসা জটিলতা এবং অবৈধ অবস্থানের কারণে বহু বাংলাদেশি কর্মী গ্রেফতারও হয়েছেন।

বিদেশে শ্রমিক পাঠানো কমে যাওয়ার পেছনে অনিয়ম, সিন্ডিকেট, দক্ষতা অভাব এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার দুর্বলতাকেই দায়ী করছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, বর্তমানে প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী মাত্র ছয়টি দেশে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দক্ষতা ও বৈচিত্র্য ছাড়া বাজার টিকে থাকবে না।

অভিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ওকাপের সভাপতি শাকিরুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়া ও ওমানে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। জাল আবেদন, ঘুষ, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ঘটনা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট উত্তরণে সরকারের উচিত শ্রমবাজার বৈচিত্র্যকরণ, দক্ষতা উন্নয়ন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা। নিয়োগ এজেন্সিগুলোর ওপর কড়া নজরদারি চালাতে হবে, সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। তা না হলে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়লেও বিদেশে কর্মসংস্থানের পথ সংকুচিত হতে থাকবে, যা ভবিষ্যতের জন্য এক বড় বিপদ হয়ে উঠবে।