জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী: আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের আমেজ শেষ হতে না হতেই গত ২৪ জানুয়ারি পটুয়াখালী পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
তফসিল ঘোষণার সাথে সাথেই নির্বাচনী আমেজে ছড়িয়ে পড়ে পৌর এলাকার আনাচে কানাচে। নিজ নিজ প্রচারনায় ব্যস্ত হয়ে পরে মেয়র কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
নির্বাচনের আগেই পথ সভা, উঠান বৈঠক মিছিলে পটুয়াখালী শহরে তৈরি হয়েছে এক ভিন্ন আমেজ। কে হবেন পৌর পিতা। এ ব্যাপার নিয়েই চলছে চুল ছেঁড়া বিশ্লেষণ।
নির্বাচন শুরুর বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই ছয়জন মেয়র পদপ্রার্থী ও ৯টি ওয়ার্ডে মোট ৪০ জন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করে প্রার্থীরা। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ প্রার্থী। তবে সময়ের সাথে সাথে মেয়র পদপ্রার্থীদের সংখ্যা কমে চারজন হয়েছে। যাদের মধ্যে বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ ও সাবেক মেয়র পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শফিকুল ইসলাম রয়েছেন আলোচনার কেন্দ্রে। বাকি দুইজন জনসাধারণের কাছে এখনো পর্যন্ত নিজেদের পরিচিত করতে পারেননি। যার মধ্যে একজন হলেন পটুয়াখালী পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনায়েত হোসেন ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া।
তবে কে হতে যাচ্ছেন পটুয়াখালী পৌর মেয়র সাবেক নাকি বর্তমান এ নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে চলছে আলোচনা। এদিকে হেভিওযয়েট এই দুই প্রার্থী পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভোটারদের সাথে দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। তবে দুইজন দুইজনার সমালোচনা করতে দেখা গিয়েছে বেশির ভাগ সময় প্রচারণার উঠান বৈঠক বা আলোচনা সভা
গুলোতে।
তবে দুইজনারই রয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ পটুয়াখালী শহরের দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি কাজ করে রয়েছেন মানুষের নজরে। অপরদিকে সেই ১৫ থেকে ২০ বছর আগে থেকে স্বল্প আয়ের মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা, বিভিন্ন সময় আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে এক শ্রেণি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন।
পটুয়াখালী শহরের দিন মজুর মজিবর বলেন, আমি আগেও দেখেছি উন্নয়ন হয়েছে এখনো দেখতাছি একছের উন্নয়ন। কিন্তু আমার তো কোনো উন্নয়ন হয় নাই। আসলে উন্নয়ন সবাইর সময় হয়। তবে হেইডা হয় বড় লোকের
লইগগা। নির্বাচন আইলেই সবাই একছের আমাগো উন্নয়ন করতে আয়।
ব্যায়ামাগার মোড়ের চায়ের দোকানি রফেজ বলেন, যে ভালো কাজ করবে। যারে আমার মনে হবে সে আমাদের সবার জন্য ভালো কাজ করবেন। আমি তাকেই ভোট দেবো।
৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সালাম বলেন, এখন আমাদের পটুয়াখালীর রাস্তাঘাট বা বিভিন্ন স্থাপনা যথেষ্ট সুন্দর আছে। এখন যেটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে বেকারত্ব ঘোচানো ও মাদক নির্মূল করা। কিন্তু এই দুইটি ক্ষেত্রে সত্যি কেউই খুব একটা এগোতে পারেনি। আসলে এই দুইটা ব্যাপার নিয়ে প্রত্যেক প্রার্থীর কাজ করা উচিত।
সাবেক ও বর্তমান এই দুই মেয়র প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখার মতো হবে বলে অনেকের ধারণা। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা
কাজী আলমগীরকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়ায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান সাবেক মেয়র ডাঃ শফিকুল ইসলাম। তবে সেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়রের কাছে বিপুল ভোটে হেরে যায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। তবে বর্তমান নির্বাচনে কোনো দলীয় প্রতীক না থাকায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলে সর্বসম্মতিক্রমে স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থন প্রদান করা হয়েছে সাবেক মেয়র ডা. শফিকুল ইসলাম এমনটাই জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর।
এদিকে বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিনের দলীয় কোনো পদ পদবী না থাকলেও তিনিও আওয়ামী লীগের একজন নিজেকে দাবি করলেও তিনি বিএনপি মনা। কারন তার পরিবারে সকলেই বিএনপির। এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে কে হতে যাচ্ছেন পটুয়াখালীর ভবিষ্যৎ মেয়র। কার হাতে পাঁচটি বছর থাকবে পৌরবাসীর ভবিষ্যৎ।
বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি কি করেছি গত পাঁচ বছরে সেটা মানুষ জানে। পটুয়াখালীতে দৃশ্যমান যতো কাজ হয়েছে সেটিই আমার সময়। আজ পটুয়াখালী পেওর শহর দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে
মানুষ আসে। আমি বিশ্বাস করি মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমি যা করেছি তার ভালো মন্দ বিচার করে আমাকে আবারো জনগণ নির্বাচিত করবে।
সাবেক মেয়র ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি যখন মেয়র ছিলাম সেই সময়ে দল মত নির্বিশেষে সকল মানুষ আমার কাছে আসতে পেরেছে। আমার সময় সব থেকে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে এই পৌরসভা। যেই কাজগুলো এখন মানুষ দেখতে পাচ্ছে এইগুলো আমার সময় রেখে যাওয়া বরাদ্দের অংশ। আমি মাই ম্যান হিসাব করে নাগরিক সুবিধা দেইনি। আমি শাসক নয় সেবক হয়ে কাজ করেছি। আমাকে আমার এই পটুয়াখালী পৌরসভার মানুষরা আবারো ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে আমি তাদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাবো।
স্বাআলো/এস