পবিত্র শবে মেরাজ

সম্পাদকীয়: ফার্সি ভাষায় শব-এর অর্থ হচ্ছে রাত আর আরবি ভাষায় মেরাজ অর্থ হচ্ছে সিঁড়ি বা ঊর্ধ্বারোহণ। অর্থাৎ রাতে ঊর্ধ্ব জগতে আরোহণ। হিজরি দিনপঞ্জী অনুসারে আজ ২৬ রজব দিবাগত রাতে সেই পবিত্র শবে মেরাজ।

এই রাতে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) মেরাজ গমন করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সান্নিধ্য লাভ করেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ রাতে শবে মেরাজ পালন করেন।
ইসলামে এই রাতকে বিশেষ ইবাদত-বন্দেগি ও দোয়া কবুলের পবিত্র রাত হিসেবে গণ্য করা হয়।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কোরআন তিলাওয়াত ও জিকির-আজকারের মধ্য দিয়ে রাতটি কাটাবেন। অনেকে নফল রোজাও রাখেন। দান-সদকাও করেন।

ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত সফরকে ‘ইসরা’ এবং মসজিদুল আকসা হতে সাত আসমান পেরিয়ে আরশে আজিম সফরকে ‘মেরাজ’ বলা হয়। ইতিহাসের নিরিখে নবুওয়াতের দশম বছর ও ৬২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ রজব দিবাগত রাতে মহানবী (সা.) আল্লাহর সান্নিধ্যে মেরাজ গমন করেন।

পবিত্র কোরআনের সুরা বনি ঈসরাইল ও সূরা নজমের আয়াতে, তাফসিরে এবং সব হাদিস গ্রন্থে মেরাজের ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। পবিত্র এই রাতে হযরত জিবরাইলের (আ.) সঙ্গে নবীজী প্রথমে বায়তুল্লূাহ শরিফ থেকে বোরাকে চড়ে বায়তুল মুকাদ্দাস গমন করেন। সেখানে হযরত আদমসহ (আ.) নবীদের (আ.) নিয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন। তারপর সেখান থেকে তিনি এই রাতেই সপ্তম আকাশ পেরিয়ে সিদরাতুল মুনতাহায় উপনীত হন।

এরপর রফরফ নামক বাহনে চড়ে আল্লাহর প্রিয় হাবিব মহান প্রভুর অনুগ্রহে আরশে আজিমে পৌঁছেন। আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভ ও সরাসরি কথোপকথন শেষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করেন প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ (সা.)।

শবে মেরাজ থেকে আমরা নিষ্পাপ ও সুশীল মানুষ হওয়ার শিক্ষা পাই। যে শিক্ষা মহানবী (সা.) মেরাজে গিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে পেয়েছিলেন। এই শিক্ষাগুলো হলো শিরক না করা, মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার, নিকটাত্মীয়দের হক প্রদান, মিসকিনের হক প্রদান, অপব্যয় না করা, অভাবের ভয়ে সন্তান হত্যা না করা, ব্যাভিচার না করা, আল্লাহ নিষিদ্ধ কাউকে হত্যা না করা, এতিমের সম্পদ দখল না করা, মাপে কম না দেয়া, অজানা বিষয় অনুসরণ করা, দম্ভভরে না চলা, ওয়াদা পূরণ করা এবং ব্যয় কুন্ঠ না হওয়া আবার একেবারে মুক্ত হস্ত না হওয়া।

এই শিক্ষা সমাজে বাস্তবায়িত হলে হানাহানি, দ্বদ্ব, সংঘাত দূর হয়ে অনাবিল শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। ইসলাম অর্থই শান্তি। পবিত্র মেরাজের শিক্ষা আমাদেরকে আল্লাহ ভীতিতে অনুপ্রাণিত করুক। যার ভেতর মেরাজের শিক্ষা আছে সে কোনো দিন অন্যায় করতে পারে না। আর সবাই যদি এই শিক্ষায় গড়ে ওঠে তাহলে সমাজে অশান্তি থাকতে পারে না। মেরাজের শিক্ষায় জাতি সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে উঠুক এ কামনা করি।

স্বাআলো/এস

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

`সড়কে ফিটনেসবিহীন বাস চলবে না’

সারাদেশে মোট ১৪ হাজার অনুমোদিত বাস ও ট্রাকের ফিটনেস...

পবিত্র শবে মেরাজ ২৭ জানুয়ারি 

বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাসের চাঁদ...

পটুয়াখালীতে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী: বর্ণিল আয়োজনে পটুয়াখালীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের...

কাল খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে ইসি

হালনাগাদ শেষে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ...