রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা: এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে নদীর চরভরাটি জমিতে বসবাসরত ২৫টি পরিবারের উপর হামলা চলোনো হয়েছে। এ সময় ওইসব পরিবারের বাড়িঘর ভাঙচুর শেষে সর্বস্ব লুটপাট করা হয়েছে। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তিনটি বাড়ি। ভাqচুর ও লুটপাটে বাধা দেয়ায় ওইসব পরিবারের নারী ও পুরুষসহ ২০ জন জখম হয়েছে।
আহতদের আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের রাধাবল্লভপুর মদন পাড়ায় বৃহষ্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুই ঘণ্টাব্যাপী এ হামলা চালানো হয়।
আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীনরা হলেন, রাধাবল্লভ মদনপাড়া গ্রামের খোদা বক্স গাজীর ছেলে আজিজুল গাজী, তার ভাই জাকির হোসেন, হাজের আলী গাজীর ছেলে আজগার আলী গাজী, বক্স গাজীর ছেলে কামরুল গাজী, এলাহী বক্স গাজীর ছেলে মিজানুর রহমান গাজী, শচীন গোলদারের ছেলে সবুজ গোলদার, সিরাজ গাজীর ছেলে আরিফুল গাজী, আজিজুল গাজীর স্ত্রী জাহানারা খাতুন, আজিজুল গাজীর মেয়ে ফজিলা খাতুন, আজগার আলীর স্ত্রী রহিমা খাতুন আজগার আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী, আরিফুল গাজীর স্ত্রী ময়না বিবি, সাইফুল মোড়ল, ধনা মোড়ল ও নবাব গাজী। এ ছাড়া পাঁচজনকে বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন জাকির হোসেন গাজী জানান, রাধাবল্লভপুর মৌজার মদনপাড়ায় সরকারি ১৫ বিঘা খাস জমিতে জমিতে তারাসহ ২৫টি পরিবার ২০১২ সাল থেকে ডিসিআর নিয়ে বসাবাস করে আসছেন। নদীখননের পর জমি কমে চার থেকে পাঁচ বিঘা হয়ে যাওয়ায় তারা মরিচ্চাপ নদীর চরভরাটি ৩০ বিঘারও বেশি জমি ডিসিআর নেয়ার জন্য ২০২১ সালে আবেদন করেন। যাহা ডিসিআর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু গতবছরের ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে কাদাকাটি ইউনিয়ন বিএনপি’র একাংশের আহবায়ক ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি মহল ডিসিআর নেওয়া ও মরিচ্চাপ নদীর চরভরাটি জমি তাদেও দাবি করে ওই জমি দখলের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। ওই হুমকিদাতাদের মদত দিয়ে আসছিলো ব্রাহ্ম তেঁতুলিয়ার আব্দুর রাজ্জাক মোড়লের ছেলে পুলিশের এএসআই জাকির হোসেন মোড়ল। এরই ধারাবাহিকতায় এএসআই জাকির হোসেনের পরিকল্পনায় বিএনপি নেতা জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে ব্রাহ্ম তেতুলিয়া গ্রামের পাগলা মোড়লের ছেলে রইচউদ্দিন মোড়ল ওরফে বড় খোকন, মাহফুজ সরদারের ছেলে নজরুল সরদার, সমছের মোড়লের ছেলে আবু সাঈদ মোড়ল, মাহাবুব সরদারের ছেলে নজরুল সরদার, তার ভাই নূর ইসলাম মোড়ল, মোকছেদ মোড়লের ছেলে ইদ্রিস মোড়ল, আলফাজউদ্দিন মোড়লের ছেলে মুজিবর মোড়ল, মকবুল মোড়লের চেলে অহিদুল মোড়ল, মোকছেদ মোড়লের ছেলে ইউনুস মোড়ল, শরবৎ মোড়লের ছেলে মামুন মোড়ল, মোকছেদ মোড়লের ছেলে শরিফুল মোড়ল, মদনপাড়ার আনছার মোড়লের ছিলে রফিকুল মোড়ল, ইসলাম মোড়লের ছেলে রবিউল মাড়ল, মোস্তফা মোড়লের ছেলে আলাল মোড়ল, খোদাবক্স মোড়লের ছেলে দিদারুল মোড়লসহ শতাধিক ভাড়াটিয় সশস্ত্র লাঠিয়াল বাহিনী হাতে দা, লাঠি, লোহার রড, জিআই পাইপ নিয়ে বৃহষ্পতিবার তাদের বাড়িসহ মদনপাড়ার ২৫টি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। ভাঙচুর ও লুটপাঠে বাধা দেয়ায় তাকেসহ কমপক্ষে ২০ জন নারী ও পুরুষকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা হয়। আজিজুল ও আজগারের বসতবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। নগদ টাকা, সোনার গহনা ও বাড়ির ব্যবহৃত আসবাবাপত্রসহ ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় তারা। পুলিশ ও স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
স্থানীয় আব্দুল কুদ্দুস, রহমত আলীসহ কয়েকজন জানান, হামলাকারীদের সহিংসতার ভয়াবহতা দেখে কেউ অসহায় পরিবারগুলোর সদস্যদের রক্ষা করার জন্য এগিয়ে যেতে পারেননি। তবে এএসআই জাকির হোসেন মোড়ল বুধবার ছুটিতে বাড়িতে আসেন। রাতে তিনি আশাশুনি থানায় যান। সেখানে বিশেষ পরামর্শ শেষে তারই ইন্ধনে বিএনপি নেতা জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে সশস্ত্র হামলা চালানো হয়।
এ ব্যাপারে এএসআই জাকির মোড়ল ও বিএনপি নেতা জহিরুল ইসলামের সাথে শুক্রবার সন্ধ্যায় মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নোমান হোসেন জানান, এ ঘটনায় জাকির হোসেন গাজী বাদী হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
স্বাআলো/এস