টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের কবলে পড়ে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হিমাচল প্রদেশে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এই দুর্যোগে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, কারণ আগামী দিনগুলোতে আরও ভারি বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০ জুন মৌসুমি বায়ু হিমাচল প্রদেশে প্রবেশ করার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, শুধু মান্ডি জেলাতেই ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া, কাংড়ায় ১৩ জন, চাম্বায় ছয়জন এবং শিমলায় পাঁচজনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। বিলাসপুর, হামিরপুর, কিন্নৌর, কুল্লু, লাহুল স্পিতি, সিরমাউর, সোলান ও উনা জেলা থেকেও প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
এই দুর্যোগে রাজ্যজুড়ে ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের সংখ্যাও বাড়ছে; শুধু মান্ডি জেলা থেকেই কমপক্ষে ৪০ জন নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মান্ডির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে থুনাগ ও বাগসায়েদ। মান্ডির কারসোগ এবং ধর্মপুর এলাকাতেও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের খবর পাওয়া গেছে।
রাজ্য সরকার জানিয়েছে, এই দুর্যোগে প্রাথমিকভাবে ৪০০ কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্ভবত অনেক বেশি হবে। রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং রাজস্ব বিভাগের বিশেষ সচিব ডিসি রানা বলেন, “এ পর্যন্ত ৪০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জেনেছি। তবে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ সম্ভবত অনেক বেশি। আমাদের এখন লক্ষ্য অনুসন্ধান, উদ্ধার এবং পুনরুদ্ধার করা। ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত মূল্যায়নে সময় লাগবে।”
পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে কারণ, আগামী সোমবার (৭ জুলাই) পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত জেলায় ভারি বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে এবং সতর্ক থাকতে তাগাদা দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকারও হিমাচলের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কেবল হিমাচল নয়, গুজরাট, রাজস্থানসহ বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্য রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টিপাতের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক এনডিআরএফ (জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী) দল মোতায়েন করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে আরও লোকবল পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
রাজ্যজুড়ে ত্রাণ, অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পুরোদমে চলছে। বিশেষ করে মান্ডি জেলাসহ যেসব এলাকায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেখানে উদ্ধারকর্মীরা আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ করছেন।
স্বাআলো/এস