জাতীয়

প্রতারণা করে কোটি টাকার মালিক বেনজির, বহুতল ভবন রয়েছে যশোরেও

| November 27, 2023

নড়াইলের আড়পাড়ার বেনজির হোসেন। দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস নেই বেনজিরের। তারপরেও মাত্র পাঁচ বছরে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছে সে। পাঁচ বিঘা জমির ওপর দুইটি ডুপ্লেক্স ভবন, যেখানে থাকে বেনজির। এছাড়া একাধিক নির্মাণাধীণ ভবনের পাশাপাশি যশোর ও সাভারেও বহুতল ভবন আছে তার।

পুলিশ বলছে, জীবনের প্রথমে একটি চাকরিতে যোগ দিলেও চুরির দায়ে তার চাকরি চলে যায়। তারপর আর কোনো চাকরি করেনি সে, শুরু করে প্রতারণা। দীর্ঘ পাঁচ বছরে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন সময়ে অন্তত ৫০ জন নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে প্রতারণার অর্থ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে চাকরি দেয়ার নামে হাতিয়ে নেয়া অর্থ দিয়ে এতো কিছু করেছেন তিনি। সম্প্রতি তিন কোটি টাকায় তিন বিঘা জমির ওপর তৈরি বিলাসবহুল ভবন কিনেছে। এ ছাড়া ২০ বিঘার মাছের ঘের এবং যশোর ও ঢাকার সাভারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণাধীন আরো কয়েকটি ভবনের কাজ চলছে তার।

গত ২২ নভেম্বর খুলনার ফুলতলা এলাকায় প্রতারণার টাকা ক্যাশ আউট করার সময় হাতেনাতে তাকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের টিম লিডার সহকারী কমিশনার আরিফুর রহমান তুহিন।

এ বিষয়ে জানাতে সোমবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি প্রধান) আসাদুজ্জামান বলেন, প্রতারক বেনজির যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহিদ হাসান নামে এক বাংলাদেশি বিমান চালকের ফেসবুক আইডি হুবহু কপি করে একটি ভুয়া আইডি তৈরি করে। এটি বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য সে শাহিদের আইডি থেকে নেয়া বিমান চালনার ছবি ও ভিডিও নিয়মিত পোস্ট করতো। তার প্রধান টার্গেট নিঃসঙ্গ নারীরা। পরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের পরিবারসহ আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতো। এর একপর্যায়ে বিপদে পড়ার কথা বলে তার দেয়া বিভিন্ন নগদ নম্বরে টাকা পাঠাতে বলতো সে।

তিনি বলেন, বেনজিরের প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত এমন ১৩টি নগদ নম্বরে গত চার মাসে এক কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। নড়াইলের বাড়িতে থেকে প্রতারণার কাজ করলেও সে টাকা উঠাতো যশোর ও খুলনার বিভিন্ন ক্যাশ আউট পয়েন্ট থেকে। অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নগদ অ্যাকাউন্টের নম্বরগুলোতে ব্যবহৃত সিমকার্ড রেজিস্ট্রেশন করা। এ ছাড়া প্রতারণার টাকা ক্যাশ আউট করার সময় বেনজির সবোর্চ্চ সর্তকতা অবলম্বন করতো। সে ক্যাপ, সানগ্লাস ও মাস্ক পরে টাকা উত্তোলন করতো। সম্প্রতি এমন একজন সিঙ্গেল মাদার বেনজিরের প্রতারণার শিকার হয়ে প্রায় কোটি টাকা খুইয়েছেন। আরেক জন খুইয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এদের মধ্যে একজন ভুক্তভোগী গত ২১ নভেম্বর ডিএমপির ওয়ারী থানায় মামলা করে। পরে ছায়া তদন্তে নামে সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। পরের দিন ২২ নভেম্বর বেনজিরকে খুলনার ফুলতলা থেকে গ্রেফতার করে।

সিটিটিসি বলছে, রোমান্স স্ক্যাম ছাড়াও বেনজির বিভিন্ন সময় পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা, সেনাবাহিনী ও পুলিশে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা, হুন্ডি ব্যবসা ও মানবপাচারের মতো নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলো। প্রতারণার টাকা দিয়ে সে অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। নড়াইলে পাঁচ বিঘা জমির ওপর দুইটি ডুপ্লেক্স ভবনসহ বাগানবাড়ি, জেলার বিভিন্ন জায়গায় ২০ বিঘার মতো মাছের ঘের ও একাধিক নির্মাণাধীণ ভবনের পাশাপাশি যশোর ও সাভারেও বহুতল ভবন আছে তার।

এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, বেনজির এইচএসসি পাস করে একটা চাকরিতে যোগ দেয়। চুরির দায়ে সেই চাকরি চলে যায়। সে খুবই নিন্মবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার বাবা ওই অঞ্চলের বিভিন্ন হাট বাজারে তালের শাস বিক্রি করতো। তবে খুব মেধাবী ছিলো বেনজীর। তার বৈধ কোনো পেশা নাই। তার কাজই প্রতারণা করা। এলাকার সাধারণ মানুষ সন্দেহ করলেও ভয়ে তারা মুখ খুলতো না।

দেশে থেকে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতারক বেনজীর যুক্তরাষ্ট্রের সময় মেনে নারীদের সঙ্গে কথা বলতো। তবে কারও সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতো না। টাকা নেয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রে তার ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করে দিয়েছে, বলে জানাতো। তার প্রতারণার শিকার অসংখ্য নারী। এর মধ্যে সে প্রতারণার শিকার হয়ে এক নারী আত্মহত্যাও করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

স্বাআলো/এসএ

Shadhin Alo

Leave a Reply