সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর যশোর জেলা আহ্বায়ক রাশেদ খান পদত্যাগ করেছেন। তিনি ব্যক্তিগত সংকট, মতাদর্শগত মতভেদ এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নিষ্ক্রিয়তা ও একচেটিয়াকরণের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে এই সিদ্ধান্ত নেন।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) গভীর রাতে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তার এই ঘোষণায় সংগঠনটির অভ্যন্তরে ও স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
রাশেদ তার পোস্টে লেখেন, “সংগঠনের জন্য শ্রম, মেধা ও সময় ব্যয় করেছি, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে দীর্ঘদিন ধরে কোনো পেশাগত কর্মে যুক্ত না থাকায় অর্থসংকটে ভুগছি। এ অবস্থায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠেছে।” তিনি জানান, একজন আর্টিস্ট হিসেবে তার পেশাগত জীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নিজের বিরুদ্ধে ছড়ানো ‘মুখরোচক গল্প’-গুলোকে ‘রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “যারা আমার নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে, আমি তাদের চ্যালেঞ্জ করছি—গোয়েন্দা তদন্ত হোক, আমি প্রস্তুত।”
কেন্দ্রীয় কমিটির সমালোচনায় রাশেদ বলেন, “সংগঠনের কোনো সুস্পষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ নেই, অথচ নেতৃত্বের মধ্যে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রভাব স্পষ্ট। সংগঠনের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে, যা ‘এনসিপি’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।”
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি: ফিরে দেখা ১ জুলাই
তার এই পদত্যাগের খবরে সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ রাশেদের ‘সততা’ ও ‘ত্যাগের মনোভাব’-এর প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ একে সংগঠন দুর্বল করার কৌশল বলেও মন্তব্য করছেন। একজন সহকর্মীর মন্তব্যে জবাবে রাশেদ লিখেছেন, “সারাক্ষণ কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি, এসব আর ভালো লাগছে না”—যা তার গভীর হতাশা ও ক্লান্তির ইঙ্গিত দেয়।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটি ১০১ সদস্যের যশোর জেলা কমিটি ঘোষণা করে। রাশেদ খানকে করা হয় আহ্বায়ক এবং জেসিনা মোর্শেদ প্রাপ্তিকে সদস্যসচিব। কিন্তু কমিটি ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুগ্ম আহ্বায়ক-১ মাসুম বিল্লাহ পদত্যাগ করেন। পরে আরও সাতজন নেতা পদত্যাগ করেন এবং ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সদস্যসচিব প্রাপ্তির পদ স্থগিত করা হয়।
স্থানীয় নেতাদের মতে, রাশেদ খান ছিলেন যশোরে কোটা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। গত বছরের জুলাই–অভ্যুত্থানের সময় তার নেতৃত্বেই যশোরে আন্দোলনের গতি বৃদ্ধি পায়।
রাশেদের পদত্যাগের ফলে সংগঠনটির যশোর ইউনিটে নেতৃত্ব সংকট তৈরি হয়েছে। গুঞ্জন উঠেছে, তার অনুসারী অন্তত এক ডজন নেতাও শিগগির পদত্যাগ করতে পারেন।
আন্দোলনের বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে এমন পদত্যাগ সংগঠনটির ভবিষ্যৎ পথচলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাআলো/এস