বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে সমাজের চলমান পরিস্থিতি এবং আন্দোলনের অর্জন নিয়ে নিজের গভীর পর্যবেক্ষণ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী এলিনা শাম্মী।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই সময়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিনোদন জগতের শিল্পীরাও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও পুলিশের গুলিতে বহু প্রাণহানির ঘটনায় সাধারণ মানুষ ও শিল্পীদের একটি বড় অংশ শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানিয়ে রাজপথে নামেন এবং প্রতিবাদ জানান। সেই প্রতিবাদী তালিকায় ছিলেন অভিনেত্রী এলিনা শাম্মীও। তিনি তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের পক্ষে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন।
আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে নিজের ফেসবুক পোস্টে এলিনা শাম্মী একটি ফল পচে যাওয়ার উপমা দিয়ে লেখেন, “যখন একটা ফলের বেশির ভাগ অংশই পচে যায়, সেই ফল খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে। একটা সমাজেও যখন পচন ধরে, এবং বেশি অংশই পচে যায়, তখন সেখানে অনেকখানি বাদ দিয়ে নতুন করে শুরু করতে হয়। সেজন্য সময়ের প্রয়োজন হয়।” তিনি মনে করেন, দীর্ঘ এক-দেড় যুগ ধরে যে সমাজে ধীরে ধীরে পচন ধরেছিল, সেখানে এক বছরেই রাতারাতি পরিবর্তন আশা করা বাস্তবসম্মত নয়।
হাসপাতাল ভাইকে ভর্তি নেয়নি, মৃত্যুর পর মাহির ক্ষোভ
অভিনেত্রী আরো বলেন, সময় বদলায় এবং সময়ের প্রয়োজনে শাসকও বদলায়, কিন্তু দেশের জনগণ একই থেকে যায়। তিনি আমাদের সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও অভ্যাস নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন। তার ভাষায়, মানুষ অভ্যাসের দাস। আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে ঘুষ নেয়ার, আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে ঘুষ দেয়ার। আমরা রমজান এলে, বন্যা এলে জিনিসপত্রের দাম বাড়াই…। কেউ সত্য কথা বলতে এলে তাকে গুম করি অথবা খুন করি অথবা প্রাণপণ করে সমাজের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করি।
তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিগুলোতে ছাত্ররা যেন শিক্ষক, আর শিক্ষককে নিজেদের মান-সম্মান রক্ষা করতে ছাত্রদের মতো আচরণ করতে হয়।” এছাড়া ঈদ এলে পরিবহন ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো, মতের মিল না হলে গুরুজনদের গায়ে হাত তোলা, এবং ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগেই “আপনার ভোট দেয়া হয়ে গেছে” শুনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করেন তিনি।
এলিনা শাম্মী বলেন, এমন শত শত অসঙ্গতি আমাদের সমাজে দেখা যায়, যা আমাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। এই অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে হলে দেশে দীর্ঘ সময় ধরে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন এবং এর জন্য সময় লাগবে।
নিজের ও সমাজের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব তুলে ধরে এই অভিনেত্রী আত্মসমালোচনা করে লেখেন, সমস্যা হচ্ছে আমি সুন্দর দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি আবার আমিই দুর্নীতি করি। আমিই স্বৈরাচারকে হটাই কিন্তু ব্যক্তিজীবনে আমিই যেন স্বৈরাচার। আমি ময়লা দেখলে নাক সিঁটকাই, আবার আমিই আমার ময়লার পলিথিন রাস্তায় ফেলি। ঘুষ মন্দ বলে চিৎকার করি, আবার ঘুষ দেওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজি।
সবশেষে তিনি সবাইকে নিজেদের বদলানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভাই, নিজেকে বদলে নিন, দেশ বদলাতে কয়দিন।
স্বাআলো/এস