কোটা আন্দোলন নিয়ে যা বললেন মেহজাবীন

বিনোদন ডেস্ক: কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে যখন সারাদেশ উত্তাল, তখন বসে নেই বিনোদন অঙ্গনের তারকারাও। একের পর এক তারকা এ আন্দোলন নিয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করছেন। এবার মুখ খুলেছেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী।

তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ছোটবেলা থেকে জেনেছি, পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র নারীর গায়ে হাত তোলা সমর্থন করে না। আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থও কখনো নারীর প্রতি সহিংসতা শেখায়নি। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, তোমরা নারীদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার কর’। হাদিসে বলা হয়েছে, তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা নারীদের সঙ্গে সদাচরণ করে’। অথচ আমাদের দুর্ভাগ্য, গণমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমে আজকাল এর ভিন্ন চিত্র, মর্মান্তিক সব ভিডিও চিত্র দেখতে হচ্ছে।

একজন নয়, দুইজন নয়, আমারই অসংখ্য বোনের ওপর নির্বিকার ভঙ্গিতে হামলা চালানো হচ্ছে, রক্তাক্ত করা হচ্ছে। কী নির্মম, কী নৃশংস! ন্যায়-অন্যায়ের প্রসঙ্গে পরে আসছি, তবে আমার অবস্থান থেকে বলবো: সর্বোচ্চ কোনো যুক্তির অজুহাতেও নারীর প্রতি এই সহিংসতা মেনে নেয়া যায় না। ‘না’ মানে ‘না’; কক্ষণো না। ছাত্র-ছাত্রীরা কি-ই বা করেছিলো? তারা তাদের অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছিলো। কোটা সংস্কারের দাবি তুলেছিলো। তাই তো? একটি গণতান্ত্রিক দেশে স্বঅধিকারের দাবি যে কেউ তুলতে পারে। কিন্তু তাই বলে নারীর গায়ে হাত তোলা, ‘আবু সাঈদ’-এর মতো সম্ভাবনাময় তরুণকে হত্যা করা-এসব কি সভ্যতার পর্যায়ে পড়ে? সমাধানের অন্য কোনো উপায় কি ছিলো না? গুলি কেন করতে হলো?

পরিস্থিতি হয়তো আজ কিংবা কাল স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু যে মা’য়ের বুক খালি হলো, যে পরিবারের মুখের হাসি চলে গেল, আমরা কি সেই শূন্যতা অন্য কিছুর বিনিময়ে পূর্ণ করতে পারবো? কক্ষণো না। তাছাড়া ইতিহাস সাক্ষী: শক্তি যত বড়-ই হোক, ছাত্র সমাজের ওপর চড়াও হয়ে যুগে যুগে কেউ কখনো কিছুই অর্জন করতে পারেনি। তাহলে কেন এই ব্যর্থ আস্ফালন? মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ কিংবা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা সবসময়ই বুকের ভেতর লালন করি। আমরা গর্ব করি বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু এই দেশে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করা যাবে না, অধিকারের দাবি তোলা যাবে না, সবকিছুর ঊর্ধ্বে যোগ্যতার পরিচয়টাকেই সবচেয়ে বড় করে দেখা যাবে না, প্রশাসনের চাওয়া-পাওয়ার বিরুদ্ধে গেলেই হামলার শিকার হতে হবে, অকাতরে অকাল প্রাণ বিলিয়ে দিতে হবে-এমন বাংলাদেশের স্বপ্ন কি আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেখেছিলেন? আমার মনে হয় না।

কোটা আন্দোলনকারীদের হামলায় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী নিহত

এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে দুর্নীতি-প্রায় সব ইস্যুতেই তো আমরা চুপ থাকি। রক্ষক ভক্ষক হয়ে গেলেও আমরা নিরবে সয়ে যাই। অপেক্ষা করি, হয়তো একটা না একটা সমাধান আসবে। আজ না হলেও দুদিন পরে আসবে। অন্যান্য ইস্যুতে আমরা সামাজিক মাধ্যমেও এতটা সোচ্চার হই না। তাহলে ইদানিং কেন হচ্ছি? কেন কোটা সংস্কার ইস্যুতে দলমত নির্বিশেষে আমাদের মতো সাধারণ জনগণ সরকারের পদক্ষেপের নিন্দা করছি? কারণ একটাই: কোটা সংস্কার এখন সময়ের দাবি। যত দ্রুত সম্ভব এর সমাধান জরুরি। ভুলে গেলে চলবে না, আমরা এই সাধারণ জনগণই কিন্তু মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, উড়াল সেতু ইত্যাদি সরকারের অনেক যুগান্তকারী সাফল্যে গর্বিত হয়ে হাত তালি দিয়েছিলাম। গালভরা প্রশংসা করেছিলাম। সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়েছিলাম। নিশ্চয়ই ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি মেনে কোটা সংস্কার হবার পর আমরা পুনরায় সরকারের পাশে দাঁড়াব। এক পক্ষ হয়ে দেশের সব সমস্যার সমাধান করার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করব। সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

অর্থাৎ সব কথার শেষ কথা: ছাত্ররা আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। দমিয়ে না রেখে তাদের যৌক্তিক দাবিতে সমর্থন দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আমি মেহজাবীন চৌধুরী আকুল আবেদন করছি। আমার বিশ্বাস, আমরা নিরাশ হব না।

স্বাআলো/এস/বি

Share post:

Subscribe

Popular

আপনার জন্য
Related

যশোরে পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মুখে পিছু হটলো আদ্-দ্বীন কর্তৃপক্ষ

যশোর শহরের পুলেরহাট এলাকায় অবস্থিত আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল...

আলমডাঙ্গায় যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতন

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় চুরির অভিযোগে বজলু ফারাজী (৩৫) নামের...

চুকনগরে গরুর হাট দখল নিতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১২

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে গরুর হাট দখলকে কেন্দ্র করে...

বিদ্যমান সংবিধানে বর্তমান সরকার অবৈধ : ফরহাদ মজহার

লেখক ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘এই গণঅভ্যুত্থান আমাদের...