শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ: বিএনপি নেতার নেতৃত্বে সালিশে দফারফা, ভিডিও ভাইরাল

জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী: জেলার কোম্পানীগঞ্জে মাদরাসায় যাওয়ার পথে সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পরপরই বিষয়টি মীমাংসার নামে অভিযুক্ত শাহরুখকে (১৮) বাঁচাতে স্থানীয় বিএনপি নেতারা সালিশ বৈঠক ডেকে ২০ হাজার টাকায় মিটমাটের সিন্ধান্ত দেয়। ইতোমধ্যে এমন একটি সালিশের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে এলাকাবাসী ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে শিশু ধর্ষণচেষ্টার ঘটনার সালিসদারদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

শনিবার (১ মার্চ) উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের মিয়াজি বাড়ির পিছনে এই সালিশী বৈঠক বসে। এর আগে, একই দিন ভোরে এ ঘটনা ঘটে। তবে এ মীমাংসা মেনে নেয়নি ওই শিশুর মা।

অভিযুক্ত শাহরুখ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের সিরাজ মিয়ার নতুন বাড়ির নুর নবীর ছেলে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, সালিশের শুরুতে অভিযুক্ত যুবকের এক স্বজন সালিশদারদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনরারা যাই বলেন তাই মানি। তখন পাল্টা আরেকজন বলে মানেন বলেইতো স্বাক্ষর দিয়েছেন। এবার সালিশে উপস্থিত অনেকেই মুছারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সালিশদার আলী ওরফে জনিকে কথা বলতে বলেন।

জনি বলেন, শাহরুখ ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ায় সে অভিযুক্ত। সবার সম্মতিক্রমে কোর্ট-কাচারির দিকে না গিয়ে আমাদের এখানে রায় হয়েছে শাহরুখের ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও ২০ বেত্রাঘাত দিবেন অভিভাবকরা। এ বিচার মানলে স্ট্যাম্প সালিশদার আলমগীরের কাছে থাকবে, বিচার না মানলে স্ট্যাম্প নিয়ে যান। তখন বিচারক আলমগীর বলেন, স্ট্যাম দেয়া হবে না। এরপর সালিশদার অভিযুক্ত ছেলের বাবাকে তার ছেলেকে বেত্রাঘাত দিতে নির্দেশ দিয়ে বলেন, বেত্রাঘাতের বিষয়টি এখন নেই, তবে মিডেলিস্ট দেশে আছে। এ সময় জরিমানার টাকা একদিন পর দেয়ার কথা বলেন অভিযুক্তের বাবা। এরপর অভিযুক্ত ছেলের মা এসে ছেলেকে কয়েকটি বেত্রাঘাত করলে সে চলে যায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার মাদরাসায় আরবি পড়ার জন্য যাওয়ার পথে শাহরুখ ভিকটিমকে রাস্তা থেকে নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ওই সময় এক পথচারী দেখে ফেললে সাহরুখ পালিয়ে যায়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজনদের মাধ্যমে সালিশী বৈঠক বসে আপস-মীমাংসার চেষ্টা চলে। একপর্যায়ে ভিকটিমের ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেয়ার রায় দেয়া হয়। কিন্ত নির্যাতিত শিশুর মা সঠিক বিচারের দাবিতে স্থানীয় মীমাংসাতে রাজি হননি। ঘটনার একদিন পর রবিবার ২ মার্চ এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা দায়ের করেন।

মুছারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সালিশদার আলী ওরফে জনি বলেন, সালিশদার বেশির ভাগ বিএনপি করে। এ ছাড়া বাহার কন্ট্রাক্টর মুছাপুর ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও নয়ন আওয়ামী লীগ সমর্থন করে। সালিশদার জসিম, নয়ন,বাহার কন্ট্রাক্টর, সিকদার বাড়ির সাইফুল, দুলাল, হারুনসহ নির্যাতিত শিশুর মা আমাকে ডেকে সালিশে নেয়। ঘটনাটি আমার পাশের বাড়ির, শিশুর মা এসে কান্নাকাটি করায় আমি গিয়েছি। তবে আমার যাওয়া ঠিক হয়নি। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা সালিশের ভিডিওটি ভাইরাল করে আমাকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে করতে চাচ্ছে।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, সালিশের ভিডিওটি দেখেছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনায় একজনকে আসামি করে মামলা নেয়া হয়েছে। পুলিশ আসামিকে গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছে। অপরদিকে, ভুক্তভোগী শিশুকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

স্বাআলো/এস

Share post:

Subscribe

Popular

আপনার জন্য
Related

এক দল সরিয়ে আরেক দলকে ক্ষমতায় বসাতে গণ-অভ্যুত্থান হয়নি: নাহিদ

ঢাকা অফিস: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহবায়ক নাহিদ ইসলাম...

মেহজাবীনের চোখে ‘দাগি’: শুধু সিনেমা নয়, এক অনন্য অভিজ্ঞতা!

বিনোদন ডেস্ক: এবারের ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে দর্শকদের মন...

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

লিটন ঘোষ জয়, মাগুরা: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা...

কাল সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ

ঢাকা অফিস: ছয় দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে থাকা কারিগরি...