সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো রক্তচক্ষুকে পরোয়া করে না জামায়াত: তাহের

ঢাকা অফিস: বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামী কোনো রাষ্ট্রের রক্তচক্ষুকে ভয় পায় না এবং একটি টেকসই ও গ্রহণযোগ্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বলে জানিয়েছেন দলটির নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ তাহের।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. তাহের বলেন, যেখানে যেখানে নতুন কিছু সংযোজন বা বিয়োজনের প্রয়োজন আছে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর, সেখানে আমরা ব্যক্তি, দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি বা স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে চাই না, দেবও না। এর ঊর্ধ্বে থেকে দেশ জাতি ও মানুষের কল্যাণের জন্য যেটা প্রয়োজন জামায়াতে ইসলামী সেই কাজে সংস্কারে, পরিবর্তনে পরিপূর্ণ একমত পোষণ করে।

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার কথা উল্লেখ করে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কতিপয় ব্যাপারে খুবই দৃঢ় ও অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রথমত হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। এজন্য আমরা কোনো রাষ্ট্রের রক্তচক্ষুকে ভয় করি না। স্বাধীনতার প্রশ্নে আমরা কারও হস্তক্ষেপ পরোয়া করি না।

তিনি আরো বলেন, দ্বিতীয়ত, ক্রেডিবল ও সাসটেইনেবল (বিশ্বাসযোগ্য ও টেকসই) গণতন্ত্রের জন্য জামায়াতে ইসলামী অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা শুধু রাষ্ট্রের ভেতরে নয়, দলের ভেতরেও গণতান্ত্রিক চর্চা করি। আমাদের দলীয় নির্বাচন সময় মতো হয়। ক্যাম্পেইন ছাড়া, প্রার্থী ছাড়া, প্যানেল ছাড়া ওপেন ব্যালটে আমাদের দলীয় নির্বাচন হয়। এই চর্চা দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ওপর জোর দিয়ে ডা. তাহের বলেন, আমরা এমন নির্বাচন চাই, যেটিকে দেশের মানুষ, সারাবিশ্ব নির্বাচন বলবে। আজকে আমাদের বড় ক্রাইসিসের কারণ গত তিন টার্ম যে নির্বাচন হয়েছে তা কোনো নির্বাচন ছিল না। …জবাবদিহিতা ছিলো না। তার পরিণতি আমরা সমগ্র জাতি ভোগ করছি। আমরা এটার পুনরাবৃত্তি চাই না।

দুর্নীতিকে দেশের বর্তমান দুরাবস্থার জন্য দায়ী করে তিনি বলেন, একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চায় জামায়াত। আমরা মনে করি বাংলাদেশের বর্তমান দুরাবস্থার পেছনে বড় দায় এই দুর্নীতি। …ভোট ছাড়া নির্বাচন করা বড় করাপশন, পরিশ্রম ছাড়া টাকা আয় বড় করাপশন, দুর্নীতির নামে উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা ভোগ করা বড় করাপশন।” বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের তথ্যের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই অর্থ দেশের উন্নয়নে খরচ হলে বাংলাদেশ ভিন্ন পর্যায়ে থাকত।

নৈতিক শিক্ষাসম্পন্ন উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে জামায়াতের এই নেতা বলেন, আমরা উন্নত শিক্ষা চাই যেখানে থাকবে নৈতিকতার শিক্ষা। …আমরা নৈতিকতাসম্পন্ন উন্নত শিক্ষার আলোকিত সমাজ-রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়তে চায়। সে আলোকে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ ও কাজ করছি।

তিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে আশ্বস্ত করেন যে, গঠনমূলক, ইতিবাচক ও বাস্তবসম্মত সংস্কারের জন্য জামায়াতে ইসলামী পূর্ণ সহযোগিতা করবে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন- সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।

স্বাআলো/এস