১৬ কোটি টাকার বেনাপোল বাস টার্মিনাল: ৮ বছর ধরে অব্যবহৃত, যানজটে ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় আট বছর আগে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যশোরের বেনাপোল পৌর বাস টার্মিনালটি যাত্রীদের কোনো কাজেই আসছে না। উদ্বোধনের পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও যাত্রীবাহী কোনো বাস এই টার্মিনাল থেকে ছাড়ে না বা এখানে থামে না, ফলে বিশাল অঙ্কের সরকারি বিনিয়োগ জলে গেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। টার্মিনালটি বর্তমানে খাঁ খাঁ করছে।
দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোল চেকপোস্ট সংলগ্ন এলাকায় এবং যশোর রোডে তীব্র যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে তৎকালীন সরকার এই বাস টার্মিনালটি নির্মাণ করে। বেনাপোল পৌরসভা শহরের প্রবেশমুখে কাগজপুকুর এলাকায় মহাসড়কের পাশে এটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর দুইবার এটি উদ্বোধন করা হলেও বাস মালিক-শ্রমিক সংগঠন এবং স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর আপত্তির কারণে টার্মিনালটি চালু করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে কাগজপুকুর পর্যন্ত যানজট সমস্যা আগের মতোই রয়ে গেছে, যা যাত্রী ও সাধারণ নাগরিকদের সীমাহীন ভোগান্তির কারণ হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশ ও ভারতে যাতায়াত করেন। প্রধান সড়কের শেষ প্রান্তে নো-ম্যানস ল্যান্ড সংলগ্ন স্থানে ইমিগ্রেশন থাকায় যাত্রী ও পরিবহনের অতিরিক্ত চাপে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়েছিলো।
বেনাপোল দিয়ে দেশে ফিরলেন ভারতে পাচার হওয়া ৭ বাংলাদেশি
বেনাপোল পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডা. কাজী নাজিব হাসান দায়িত্ব গ্রহণের পর যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের নির্দেশনায় গত বছরের ৭ নভেম্বর টার্মিনালটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেন। কিন্তু এই উদ্যোগও সফল হয়নি; মাত্র সাতদিন টার্মিনালটি সচল থাকার পর মালিক-শ্রমিকরা আবার আগের মতো ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট এলাকার কাছেই বাস নিয়ে যাওয়া শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, টার্মিনালটি এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল হিসেবে মালিক-শ্রমিকরা সবসময় নতুন টার্মিনালে দুই-একটি বাস রেখে দেন।
টার্মিনালটি ব্যবহার না হওয়ার পেছনে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, তাদের মধ্যে অন্যতম বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান সনি।
তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশের সীমান্তের চেকপোস্ট থেকে তিন-চার কিলোমিটার দূরে টার্মিনাল নেই। এতো দূরে টার্মিনাল নির্মাণ করা অবাস্তব চিন্তা। সে কারণেই টার্মিনালটি ব্যবহৃত হচ্ছে না।
বেনাপোলে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিজিবি সদস্য নিহত
স্থানীয় অনেকেই টার্মিনালটির অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
শার্শা উপজেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক নূরুজ্জামান লিটনও এতো দূরে টার্মিনাল নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি এখন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের হাতে।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বেনাপোল পৌরসভার প্রশাসক ডা. কাজী নাজিব হাসান বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা নতুন বাস টার্মিনালটি চালু করেছিলাম। সেখানে নামাজের স্থান, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, আনসারদের থাকার ব্যবস্থাসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও বাস মালিকরা এই টার্মিনাল ব্যবহার না করে নো-ম্যানস ল্যান্ডের কাছে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালিত টার্মিনালে বাস নিয়ে যাচ্ছেন।
বেনাপোলে মাদকসহ ১৩ আসামি গ্রেফতার
তিনি আরো জানান, চেকপোস্ট থেকে যাত্রীদের টার্মিনালে আনা-নেয়ার জন্য শাটল বাস চালুর প্রস্তাব দেওয়া হলেও মালিকরা তা না মেনে ধর্মঘট করেছিলেন। তার মতে, এখন বন্দর কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার ওপর নতুন টার্মিনাল সচল হওয়া নির্ভর করছে।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, আমি এখানে নতুন যোগ দিয়েছি। বন্দরের পুরোনো টার্মিনালই ব্যবহৃত হচ্ছে দেখছি। এখন আন্তঃদেশীয় যাত্রীর চাপ কম থাকায় তেমন সমস্যা হচ্ছে না। তবে চাপ বাড়লে নতুন টার্মিনাল ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের রেজুলেশনও আমি দেখেছি।
যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম জানান, বিষয়টি এখন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। মন্ত্রণালয় যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে, সেভাবেই কার্যকর করা হবে।
ফলে, কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক বাস টার্মিনালটি চালুর বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত এবং বেনাপোলবাসীর যানজট ভোগান্তি কবে কমবে, তা সময়ই বলে দেবে।
স্বাআলো/এস