সেই শহিদ পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন, আ.লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামের শহিদ পরিবারের বাড়ি-ঘর অবৈধভাবে গুড়িয়ে দেয়ার পর তারা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।

অর্ধ কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনায় মামলা দিতে গেলেও পুলিশ তা গ্রহণ করছে না। উল্টো প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এজন্য পুরো পরিবারটি বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপনের পাশাপাশি নানামুখী শঙ্কার মধ্যে দিন পার করছেন।

শনিবার (২৯ জুন) প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে তারা তাদের এই করুণ পরিণতির কথা জানান। একই সাথে ন্যায় বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভৃক্তভোগী পরিবারটি।

যশোর জেলা আ.লীগের সভাপতি মিলনের তাণ্ডব, শহীদ পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে লুটপাট

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আসাদুজ্জামানের বড় ছেলে আরমান হোসেন।

সংবাদ সম্মেলন থেকে আরমান হোসেন জানান, হামিদপুর গ্রামের শহিদ শহীদ উদ্দিনের ছেলে আসাদুজ্জামানের বসতবাড়িতে গত ২৭ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন দুই শতাধিক লোকজন নিয়ে হামলা চালায়। এসময় তার ছেলে পিয়াস, শেখহাটির সন্ত্রাসী মিল্টন, বাঘারপাড়ার যাদবপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে মাইক্রো, প্রাইভেট ও মোটরসাইকেল যোগে দুই শতাধিক সন্ত্রাসী আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে একটি এস্কোভেটর ও সাতটি ট্রাক্টরের টলি নিয়ে আকস্মিকভাবে শহিদ পরিবারের বাড়িতে ঢুকে ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে লণ্ডভণ্ড ও লুটতরাজ চালায়। তারা অস্ত্রের মুখে বাড়ির সবাইকে জিম্মি করে। প্রথমে তার বৃদ্ধ বাবাকে মারধর করে মোবাইল সেট কেড়ে নেয়। এরপর সন্ত্রাসীরা তাকে ও তার ছোট ভাই জাফরীকে মারধর করে মোবাইল সেট কেড়ে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলে।

এরপর তার মা রুবিনা জামান, স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সুমি আক্তার ঘর থেকে বেরিয়ে এলে তাদেরকেও হকিস্টিক দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। এরপর সন্ত্রাসীরা একে একে ঘরে ঢুকে হকিস্টিক দিয়ে মালামাল ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালায়। সন্ত্রাসীরা ওয়্যারড্রোপ ভেঙ্গে জমি বিক্রির নগদ ১০ লাখ টাকা, প্রায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ৩০ ভরি সোনার গহনা, চার লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের তিনটি গরু, ৮০ হাজার টাকা মূল্যের ছয়টি ছাগল, ৯ হাজার টাকা মূল্যের ছয়টি রাজহাস, পাঁচ হাজার টাকা মূল্যের ১০টি মুরগী, ১২ হাজার টাকা মূল্যের ১৫টি পাতিহাঁস ও ১১০ টি কবুতর, এক লাখ টাকা মূল্যের ব্যাটারিসহ চারটি সোলার প্যানেল, ৩০ হাজার টাকা মূল্যের ১০টি লেপ-তোষক, তিন লাখ টাকা মূল্যের ১৫০ সেপ্টি মেহগনির সাইজ কাঠ, দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ৬০ মন গম, এক লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ৯০ মন ধান, এক লাখ টাকা মূল্যের ৪০ বস্তা খৈল, এক লাখ টাকা মূল্যের ২৫ মণ তিল, ২৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি পানির মটর ও বিভিন্ন ফল-ফলালীসহ প্রায় ৫৫ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল লুটপাট করে সন্ত্রাসীরা। তাছাড়া দুইটি ছাদের পাকা বিল্ডিং গুড়িয়ে দিয়ে এক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি সাধন করে।

যশোরে আইনজীবীকে মারধর, আ.লীগ সভাপতি মিলনসহ ২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সন্ত্রাসীরা একদিকে লুটপাট আর অন্যদিকে একটি এস্কোভেটর দিয়ে আট রুমের ছাদের দুইটি বসতঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা ছয়টি ট্রাক্টরের টলিতে করে লুটকৃত মালামাল নিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ, সাংবাদিক এবং স্থনীয় জনগন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং বিধ্বস্ত বাড়ি-ঘর স্বচক্ষে দেখেন। সন্ত্রাসীরা যখন ধ্বংশযজ্ঞ ও বাড়িতে লুটপাট চালায় তখন তাদের এক অংশ অস্ত্র নিয়ে বাড়ির চতুরদিক ঘিরে রেখেছিলো। কাজেই সাহায্যের জন্য এলাকার জনগণও ভয়ে এগিয়ে আসতে পারেনি। অবশ্য পুলিশ এসে সন্ত্রাসীদের একটি এস্কোভেটর ও একটি ট্রাক্টরের টলি জব্দ করে এবং তিনজনকে পুলিশ আটক করে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সন্ত্রাসীরা আমাদেরকে অস্ত্রের মুখে যেভাবে জিম্মি করে রেখেছিলো তাতে করে আমরা বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। সন্ত্রাসীদের নিয়ে শহিদুল ইসলাম মিলন আমাদের বাড়ি লুটপাট করার পর সুমি আক্তারকে অপহরণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে অপহরণ করতে ব্যর্থ হয় পরে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়।

যশোরে পুলিশ ফাঁড়ির মধ্যে পিপি মুকুলকে পেটালেন আ.লীগ সভাপতি মিলন

তিনি আরো জানান, ১৯৯৩ সালে শিল্প ব্যাংক থেকে আমার বাবার নামে ক্রয়কৃত নিলামের সম্পত্তিতে আমি ও আমার পরিবার বসবাস করে আসছি। উক্ত সম্পত্তির সকল বৈধ কাগজপত্র আমার কাছে আছে। শহিদুল ইসলাম মিলন উক্ত সম্পত্তি তার বিয়াই নুরুল ইসলামের দাবি করে দীর্ঘদিন ধরে আমার নিলামে কেনা সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করে আসছেন। তাছাড়া শহিদুল ইসলাম মিলনের বিয়াই নুরুল ইসলামের ছেলে বিশেষ বাহিনীর একজন বড় কর্মকর্তা। মিলন স্থানীয় প্রসাশনকেও এক প্রকার জিম্মি করে রেখেছেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ভুক্তভোগী আসাদুজ্জামান, তার বড় ছেলে আরমান হোসেন, মেজো ছেলে আফরুজ্জামান, ভাতিজা হাবিবুল্লাহ, বেয়াই শুকর আলী, ইদু মেম্বার ও যুবলীগ নেতা হাসানুজ্জামান প্রমুখ।

স্বাআলো/এস