জেলা প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা: জেলায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) জেলা মৎস্য কর্মকর্তার সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় জানানো হয় গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ১১৫ মেট্রিক টন মাছের ঘাটতি নিয়েই এবার জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ শুরু হচ্ছে।
২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে মাছের ঘাটতি ছিলো এক হাজার ৫০৫ মেট্রিক টন। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬২০ মেট্রিক টনে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপক কুমার পালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার ও মৎস্য জরিপ কর্মকর্তা আতাউর রহমান।
মতবিনিময় সভায় জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল জানান, চুয়াডাঙ্গায় মাছ চাষের উপযোগী জলাশয়ের পরিমাণ পাঁচ দশমিক ৫৪ ভাগ। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। জেলায় মোট জলায়তনের পরিমাণ ছয় হাজার ৫০০ দশমিক ৭৫ হেক্টর। এর মধ্যে নদী ছয়টি, আয়তন এক হাজার চার হেক্টর। পুকুর ১১ হাজার ৫৮টি, আয়তন দুই হাজার ৬৫০ দশমিক ৮১ হেক্টর। বাওড় ১০টি, আয়তন ৪৯৮ হেক্টর। বিল ৬১টি আয়তন, এক হাজার ১৬১ হেক্টর।
মাথা পিছু দৈনিক ৬৫ গ্রাম হিসাবে জেলায় বার্ষিক মাছের চাহিদা ২৫ হাজার ২৪৬ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে পুকুর, খাল, বিল-বাওড় নদী মিলিয়ে মাছ উৎপাদন হয় ২৩ হাজার ৬২৬ মেট্রিক টন। এ হিসাবে জেলায় বছরে মাছের ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৬২০ মেট্রিক টন।
গত ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে এ জেলায় মাছের আড়ৎ ছিলো ৭১টি, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯টিতে। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে মাছ চাষী ছিলো আট হাজার ৪২৬ জন, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে মাছ চাষীর সংখ্যা ৯ হাজার ৩১২ জনে দাঁড়িয়েছে। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে প্রশিক্ষণ পাওয়া মাছ চাষী ছিলো ৯৫০ জন,২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে চাষীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৪৩০ জন। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের রেণু উৎপাদন ছিলো এক হাজার ৬৫০ কেজি, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে তা বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৭৭৬ কেজিতে। তবে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে মাছের পোনা ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিলো ৪০১ জন বর্তমানে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে পোনা ব্যবসায়ীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯৭ জনে। পোনা ব্যবসায়ীর সংখ্যা কমেছে ১০৪ জন। এছাড়া জেলায় গত ও চলতি অর্থ বছরের হিসাব মতে মৎস্যজীবীর সংখ্যা পাঁচ হাজার ১১২ জন। এ সকল মৎস্যজীবী ৪৪টি মৎস্যজীবী সমিতির আওতাভুক্ত হয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন।
মতবিনিময় সভায় আরো জানানো হয়, জেলা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে মৎস্যচাষীদের মাঝে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে।
তিনি আরো জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ কার্যক্রমের প্রথম দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানের হাট বাজার ও প্রধান সড়কে মাইকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা ও মৎস্য সম্পদের সুরক্ষা এবং সমৃদ্ধি অর্জনে মৎস্য অধিদফতর কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রম বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা।
দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ বুধবার (৩১ জুলাই) জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে সড়ক র্যালী ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা ও স্থানীয় পর্যায়ে সফল মাছ চাষীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান, মাথাভাঙ্গা নদীতে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ এবং রেলস্টেশনে মৎস্য সেক্টরে বর্তমান সরকারের সাফল্য বিষয়ে নির্মিত প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন।
তৃতীয় দিনে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) জেলা মৎস্য কর্মকর্তার সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের অংশগ্রহণে জেলা মৎস্য সম্পদের স্থায়ীত্বশীল এবং সর্বোত্তম ব্যবহারের বিষয়ে মতবিনিময় সভা। চতুর্থ দিনে অর্থাৎ শুক্রবার (২ আগস্ট) চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকার বেলগাছীতে পুকুর ও জলাশয়ের পানির ভৌত রাসায়নিক গুনাগুণ পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান এবং জেলা মৎস্য কর্মকর্তার সম্মেলন কক্ষে ‘নিরাপদ প্রাণীজ আমিষের প্রধান উৎস হিসেবে মৎস্য খাতের টেকসই উন্নয়ন নিয়ে তরুণদের ভাবনা শীর্ষক মতবিনিময় সভা।
পঞ্চম দিন অর্থাৎ শনিবার (৩ আগস্ট ) চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার উক্ত বিলের পাশে পুকুর ও জলাশয়ের পানির ভৌত রাসায়নিক গুনাগুণ পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান এবং জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে মৎস্য বিষয়ে কুইজ প্রতিযোগীতা।
৬ষ্ঠ দিনে অর্থাৎ রবিবার (৪ আগস্ট) চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে সুফলভোগীদের প্রশিক্ষণ। ৭ম দিনে অর্থাৎ সোমবার (৫ আগস্ট) জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের মূল্যায়ন ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
স্বাআলো/এস