আগামী ২৬ জুন থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা। দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা গ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তবে, ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শুক্রবার (১৪ জুন) পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৫৭০ জন এবং মারা গেছেন ২৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, যা চলতি বছর এক দিনে সর্বোচ্চ। একই সময়ে ১৫৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণও আবার বাড়তে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরো দুইজনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে ১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২৬ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছে সারাদেশের ৯ হাজার ৩১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন পরীক্ষার্থী। এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে। তত্ত্বীয় পরীক্ষা ১০ আগস্ট শেষ হওয়ার পর ব্যবহারিক পরীক্ষা চলবে ১১ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত।
দেশে ফের বাড়ছে করোনা, আবারো পরীক্ষা শুরু হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে
পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু ও করোনা সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও নির্ধারিত সময়েই পরীক্ষা শুরু করার বিষয়ে তারা অনড়। সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এ জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে একাধিক বিকল্প পরিকল্পনাও ভেবে রাখা হচ্ছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, ডেঙ্গু এবং করোনা নিয়ে আমরা অবশ্যই দুশ্চিন্তায় রয়েছি। অভিভাবকরাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শঙ্কার কথা জানাচ্ছেন। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে বিষয় বেশি থাকায় পরীক্ষা নিতে সময় লাগে এবং নির্ধারিত সূচির বাইরে গিয়ে পরীক্ষার ক্ষেত্রে আপাতত কোনো বিকল্প হাতে নেই। তাই আমাদের হাতে পরীক্ষা শুরু করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।
তিনি জানান, পরীক্ষা শুরু করার পর পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিভাবকদের অনেকেই কেন্দ্র সংখ্যা বাড়িয়ে দ্রুত পরীক্ষা শেষ করার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং অটোপাস না দিয়ে দ্রুত পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করাই ভালো। অন্যদিকে, অনেক শিক্ষকও পরীক্ষা কেন্দ্রে ভিড়ের মধ্যে নিজেদের ও পরীক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা তরুণ এবং তাদের জন্য শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই হবে। হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা ও মাস্ক পরায় তিনি জোর দিয়েছেন।
বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণের বর্তমান হার অনুযায়ী পরীক্ষা শুরু না করার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনুস আলী সিদ্দিকী জানান, পরীক্ষার্থীদের মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে এবং আসন বণ্টনে দূরত্ব বজায় রাখা হবে। আগামী ১৮ জুন কেন্দ্র সচিবদের সভায় স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেয়া হবে।
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক সফিউদ্দিন সেখ ও যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আসমা বেগমও পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার কথা জানিয়ে ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার পর আন্তঃবোর্ড বৈঠকে পরীক্ষার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেছেন। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামছুল ইসলাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
সার্বিক পরিস্থিতি এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সামনে রেখে শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষা শুরুর প্রস্তুতি শেষ করলেও ডেঙ্গু ও করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তার ওপরই নির্ভর করছে পরীক্ষা সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি।
স্বাআলো/এস