চৌগাছায় গরু চোর চক্রের ৩ সদস্য আটক

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের চৌগাছা থানার ওসি আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে চৌগাছা থানা পুলিশ জীবনের ঝুকি নিয়ে তিন গরু চোরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।

আটককৃতরা হলো- খুলনার রূপসা উপজেলার বশির শেখ (৩৯), বাগেরহাট সদরের বাবুল শেখ (৫০) ও যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাবলু (৫০)।

চৌগাছা থানা সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি চৌগাছায় গরু চুরি ব্যাপক বেড়ে গিয়েছিলো। এর প্রেক্ষিতে চৌগাছা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন, ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেনসহ পুলিশের একাধিক দল প্রতিদিন রাতে টহল প্রদান অব্যাহত রাখেন। একই সাথে জনসাধারণকে সচেতন করতে বিভিন্ন গ্রামে ও মসজিদে সভা করতে থাকেন। একইসাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ গভীর রাত পর্যন্ত চৌগাছা বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে বাজারের নাইটগার্ড ও পুলিশের সাথে যৌথ টহল শুরু করে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দলোনের চৌগাছা উপজেলার আহবায়ক রাশেদুল ইসলাম রিতম বলেন, মঙ্গলবার গভীর রাতে চৌগাছা থানার ওসি নিজে যে টহল গাড়িটিতে টহল পরিচালনা করেন সেটি নিয়ে বের হন। তিনি টহলে যাওয়ার সময় চৌগাছা বাজারের প্রেসক্লাব চত্বর থেকে আমাকে গাড়িতে তুলে নেন পুলিশের টহল দেখানোর জন্য। গাড়িটিতে অন্যান্যের মধ্যে থানার এসআই আশরাফ, এসআই মেহেদী হাসান মারুফ, পুলিশ সদস্য মেহেদী হাসান ও টহল গাড়ির চালক পুলিশ সদস্য তোতা। আমরা চৌগাছা কুঠিপাড়া, দিঘলসিংহা, মাশিলা, হিজলী ক্যাম্প, মাকাপুর পুড়াপাড়া হয়ে চৌগাছার দিকে ফিরছিলাম। রাত ২টা ৩০মিনিটের দিকে গাড়িটি পুড়াপাড়া-চৌগাছা সড়কের পুড়াপাড়া ফিলিং স্টেশনের কাছাকাছি পৌছালে রাস্তার উপর প্লাস্টিকের ড্রাম সাজানো একটি পিকআপ দেখতে পান।

ওসি আনোয়ার তৎক্ষণাত সতর্ক অবস্থান নিয়ে সঙ্গীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন এবং পজিশন নিয়ে পিকআপটিকে চ্যালেঞ্জ করেন। তখন পিকআপটি ব্যাগ গিয়ারে দিয়ে পিছন দিকে পালানোর চেষ্টা করে। কিছু সময় ব্যাগ গিয়ারে গিয়ে পিকআপের চালক হঠাৎই সামনের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে পুলিশের টহল গাড়িটিকে আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন পুলিশের গাড়ির চালক তোতা বুদ্ধিমত্তার সাথে গাড়িটি রাস্তার উপর আড় করে দেন। পুলিশ সদস্যরা গাড়ি থেকে লাফিয়ে চোরদের পিকআপটিকে থামানোর চেষ্টা করে। তবে চোরেরা গাড়ি না থামিয়ে পুলিশের গাড়িকে আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং পুলিশ সদস্যদের দিকে পিকআপে থাকা চৌকাঠ ও গোয়ালের তালা ভাঙার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্র চেলে মারতে থাকে। এসময় রাস্তার পাশের নরম মাটিতে পিকআপটির চাকা গেথে যায়। সেটি আটকে গেলে ৫জন চোর ইরিধানের খেত দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ ধাওয়া করে ইরিধানের খেত থেকে বশির শেখকে (৩৯) আটক করে। পরে পুলিশ দুইটি গাভী, দুইটি মাঝারি আকৃতির এড়ে বাছুর বোঝাই পিকআপটিকে জব্দ করে। এদিকে পালিয়ে যাওয়া অন্য চোরদের মধ্যে বাবুল শেখ (৫০) নামে অন্য একজন পালিয়ে উপজেলার আন্দারকোটা বিশ্বাস পাড়ায় অবস্থান নেন। ভোর ৬টার দিকে গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক নিজের খেতে যাবার পথে গ্রামের একটি কলাগাছের ঝাড়ের মধ্যে অবস্থান নেয়া বাবুল শেখকে দেখতে পেয়ে তার কাছে জানতে চান তুমি কে? এখানে কেনো? প্রশ্নের সাথে সাথেই বাবুল শেখ কৃষক আব্দুল খালেকের মুখে এক ঘুষি মেরে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় কৃষক খালেকের চিৎকারে অন্য গ্রামবাসী এগিয়ে এসে বাবুল শেখকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। পরে সংবাদ পেয়ে পুলিশ বাবুল শেখকে উদ্ধার করে থানায় নেয়। দুই চোরকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে পুলিশ মঙ্গলবার দিনব্যাপী খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পরে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় বাবুল (৫০) নামে যশোরের অভয়নগর উপজেলার একজনকে গ্রেপ্তার দেখায় এবং অন্যদের ছেড়ে দেয়। অন্যদিকে মঙ্গলবার বিকেলে থানার পাশের ইছাপুর বটতলা থেকে একটি বড় বকনা ছাগল ও ইজিবাইকসহ এক ছাগল চোরকে আটক করে স্থানীয়রা পুলিশে দেয়।

এঘটনায় চৌগাছা থানার এসআই মেহেদী হাসান মারুফ বাদি হয়ে গ্রেফতার তিনজনসহ চোরচক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ১৮৬০ এর ৪৫৭/৩৮০/৪১১ ধারায় মামলা করেছেন।
চৌগাছা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, তাদেরকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে যশোর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতার বশির শেখের বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি, ডাকাতি প্রচেষ্টা, বিষ্ফোরক ও মাদক আইনে দেশের বিভিন্ন থানায় এর আগেও ১৬টি মামলা রয়েছে। এছাড়া বাবুল শেখের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ জীবনের ঝুকি নিয়ে তাদের গ্রেফতার করেছে। তারা তাদের সঙ্গী চোরদের তথ্য দিয়েছেন। পুলিশ তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

গ্রেফতার দুই চোর বশির শেখ ও বাবুল শেখ বলেন, তারা কয়েক মাস ধরে এভাবে বিভিন্ন জায়গায় গরু চুরি করে থাকে। অন্যদিকে গ্রেফতার অভয়নগরের বাবলু বলেন, আমি কশাইয়ের (গোশত বিক্রির) কাজ করি। আমি ওদের কাছ থেকে চুরির গরু কিনে গোশত বিক্রির অপরাধে আমাকে গ্রেফতার করেছে। তবে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চোরেরা জানিয়েছে বের হতে পারলে আবারও তারা চুরি করবে। তাদের যখন পুলিশ পরামর্শ দেয় এবার বের হয়ে ভালো হয়ে যাবা। অন্য কাজ করে খাবা। তখন চোরেরা বলে স্যার আমরা তো অন্য কাজ পারিনা। চুরি না করে কি করে খাবো?

স্বাআলো/এস

Share post:

Subscribe

Popular

আপনার জন্য
Related

তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি, কৃষকদের মাঝে আনন্দ

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট থেকে:উজানের ঢল ও শনিবার রাতের বৃষ্টিতে...

মরুকরণের মুখে উত্তরের জীবনরেখা

# পানিশুন্য তিস্তায় চাষাবাদ ব্যাহত, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি হাসানুজ্জামান হাসান,...

দুই ধাপে ৬ দিন ছুটি পাচ্ছেন চাকরিজীবীরা

ঢাকা অফিস: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চলতি মে মাসে দুই দফায়...

উপকূলে নদী রক্ষা বাঁধে ফাটল, আতঙ্কে গ্রামবাসী

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের...