লেখক ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘এই গণঅভ্যুত্থান আমাদের নতুন রাষ্ট্র গঠনের দিকে নেয় নাই। বরং শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান বহাল রাখা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই সংবিধানের অধীনে গঠিত সরকারকে আমি বৈধ মনে করি না। আমি জনগণের পক্ষে কথা বলি, তাই এই সরকারের পক্ষে থাকার প্রশ্নই আসে না।’
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে ইমাজিনেক্সট ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘জাতীয় সংস্কৃতি: প্রেক্ষিতে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘বর্তমান সংবিধান এক ধরনের উপনিবেশিক শাসনের প্রতীক। আইন প্রণয়ন করে ইংরেজরা, কিন্তু গঠনতন্ত্র আসে জনগণের অংশগ্রহণে। বর্তমান সংবিধান লুটেরামূলক মাফিয়া শ্রেণির স্বার্থে গঠিত, যা সাধারণ মানুষের শোষণ নিশ্চিত করে।’
তিনি শিক্ষার্থীদের জুলাই ঘোষণাপত্রকে নতুন রাষ্ট্রগঠনের ভিত্তিপত্র হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘এটি দেশের নতুন গঠনতন্ত্রের ভিত্তি হতে পারে।’
জাতীয় সংস্কৃতি ও জাতিবাদ নিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংস্কৃতি মানেই ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রাম। বাঙালি জাতিবাদ বা ধর্মীয় জাতিবাদ- কোনো জাতিবাদই ইসলাম সমর্থন করে না। আমাদের সাংস্কৃতিক চরিত্র হওয়া উচিত সকল প্রকার জাতিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান।’
পহেলা বৈশাখ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই উৎসবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই একটি রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী গঠিত হয়, যা একটি জাতি গঠনের গুরুত্বপূর্ণ দিক।’
অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সংস্কৃতি যতই শক্তিশালী হোক, আমাদের তা দিয়ে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। সেই সক্ষমতা তৈরিতে আমাদের ভাবতে হবে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, ‘বর্তমান সরকারকে অনির্বাচিত বলা যাবে না। যদিও এ সরকার ভোটের মাধ্যমে আসেনি, তবুও তাদের প্রতি ৭০ শতাংশের বেশি জনগণের সমর্থন রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে ৩০-৩৫ শতাংশ ভোট পেলেও সরকার গঠিত হতো। এখন অধিকাংশ জনগণ এই সরকারকে সমর্থন করছে। তাই এটি অনির্বাচিত সরকার নয়। অনির্বাচিত সরকার বলে বেড়ান বীনা সিক্রি বা ভারতের সেনাবাহিনী।’
ডিসেম্বরের পর নির্বাচন হলে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যদি নির্বাচন মার্চে হয় এবং তারপর বিশৃঙ্খলা হয়, তার দায় সেই ব্যক্তিদের নিতে হবে যারা আগেই এমন বক্তব্য দিয়েছেন।’
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন ইমাজিনেক্সট ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র মুহাম্মদ ইমতিয়াজ। ধারণাপত্র পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক জাফর ফিরোজ। এতে আরও বক্তব্য দেন শিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা, ডিইউজে-এর একাংশের সভাপতি শহীদুল ইসলামসহ অনেকে।