আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে সাইবার অপরাধ, বিশেষ করে সংগঠিত স্ক্যাম বা কেলেঙ্কারির আশঙ্কাজনক বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
সংস্থাটি জানিয়েছে, এশিয়ায়, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, কয়েক বিলিয়ন ডলারের এক বিশাল সাইবার অপরাধ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে যা এখন আফ্রিকা, ইউরোপ এবং আমেরিকাতেও তাদের কার্যক্রম বিস্তারের চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দফতর (ইউএনওডিসি) কর্তৃক প্রকাশিত এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অপরাধী চক্র অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই সাইবার অপরাধগুলো সংগঠিত করছে। তাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং অনলাইন রোম্যান্স স্ক্যাম। প্রায়শই নারীদের ব্যবহার করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বহু মানুষকে সর্বস্বান্ত করা হচ্ছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত, আক্রমণ জোরদারের ঘোষণা নেতানিয়াহুর
উদ্বেগজনক দিক হলো, এই অপরাধ চক্রগুলো মানবপাচারের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক মানুষকে সংগ্রহ করে এবং পরে তাদের এই সাইবার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে বাধ্য করে। ইউএনওডিসি’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্যাসিফিকের কার্যকরী প্রতিনিধি বেনেডিক্ট হফম্যান জানিয়েছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে এই অপরাধ “ক্যানসারের মতো” ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে অনেককে গ্রেপ্তার করলেও, অপরাধীরা দ্রুতই অন্যত্র নতুন আস্তানা গেড়ে তুলছে।
মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ দুর্বল। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অপরাধী চক্রগুলো সেখানে অবাধে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়াও, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যেও এই ধরনের অপরাধমূলক কার্যকলাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
ধেয়ে আসছে শক্তিশালী সৌরঝড়, বিদ্যুৎ-ইন্টারনেট বিপর্যয়ের শঙ্কা!
বেনেডিক্ট হফম্যানের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধের কারণে মানুষ আনুমানিক ৩,৭০০ কোটি (37 বিলিয়ন) মার্কিন ডলার খুইয়েছে। এর মধ্যে শুধু আমেরিকাতেই ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৫৬০ কোটি (5.6 বিলিয়ন) ডলার।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতিসংঘ একটি সমন্বিত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছে। সম্প্রতি, বেজিং মিয়ানমারে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি অপরাধী চক্রের অফিসে হানা দেয় এবং প্রায় ৫০টি দেশের ৭,০০০ কর্মীকে উদ্ধার করে, যাদের পাচার করে এনে জোরপূর্বক সাইবার অপরাধে যুক্ত করা হয়েছিল। কম্বোডিয়াতেও সরকার লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে, যেখানে একই ধরনের অনেক অপরাধী চক্র সক্রিয় রয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, এই ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক হুমকি কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করার জন্য দেশগুলোর মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান, আইন প্রয়োগে সহযোগিতা এবং মানব পাচার রোধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি।
স্বাআলো/এস