গত জুলাই মাসের ছাত্র আন্দোলন এবং পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজের ভাবনা ও অবস্থান তুলে ধরেছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। আন্দোলনের শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং রাজপথে সরব থাকা এই অভিনেত্রী মনে করেন জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান ছিল সঠিক এবং প্রয়োজনীয়। তবে বিপ্লবের পরের কিছু ঘটনা তাকে হতাশ করেছে এবং তিনি নিজেও অনলাইন হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরেও দেশের সমসাময়িক নানা ঘটনায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে আলোচনায় থাকা বাঁধন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তার ভাবনার কথা জানান। তিনি বলেন, জুলাইয়ের আন্দোলনের পর কিছু ঘটনা তাকে হতাশ করেছে, কারণ তিনি দেশের কাছে আরও ভালো কিছু প্রত্যাশা করেছিলেন।
অভিনেত্রী মনে করেন, নারীদের প্রতি সমাজ ও রাষ্ট্রের এক ধরণের অবহেলা আছে। তিনি নিজেও অনলাইনে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই হয়রানিকারীরা মনে করে, তিনি এটা ডিজার্ভ করেন কারণ তিনি একটি “খারাপ মেয়ে”। কেন খারাপ মেয়ে? এই প্রশ্নের উত্তরে বাঁধন বলেন, “আমার ঠোঁটকাটা। সময়ের প্রয়োজনে দেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম। বাজে ব্যাপার হচ্ছে, তারা আমাকে কোনো দলে ফেলতে পারছে না। যে কারণে সবকিছুতেই সমস্যা দেখছে।”
নির্বাচনে দুর্নীতির সাক্ষী ছিলাম: মুখ খুললেন অভিনেত্রী বাঁধন
জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে বাঁধন বলেন, “যখন গিয়েছি, তখন একটা আশার আলো দেখেছি। যারা টিভিতে সংবাদ দেখেছে, তারা আসলে বুঝতে পারবে না বাস্তবের অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল। ভেবেছিলাম, এবার একটা পরিবর্তন আসবে।” তবে তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ এতটাই দুর্নীতিগ্রস্ত একটি জাতি যে, যিনি পালিয়ে গেছেন তার রেখে যাওয়া সেই “করাপ্টেড সিস্টেম” থেকে বের হওয়া সম্ভব হয়নি।
সম্প্রতি জুলাইয়ের স্মৃতিচারণ করে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে বাঁধন বলেন, “যারা বলে জুলাই বিপ্লব ভুল ছিল — সত্যি বলতে, তাদের জন্য আমার দুঃখ হয়। ওই সময় ওই বিপ্লব একদম প্রয়োজনীয় ছিল। মানুষ যে পরিমাণ অবিচার, অন্যায় এবং দমন-পীড়নের মুখোমুখি হচ্ছিল, তা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।” তার মতে, পূর্ববর্তী সরকার ধাপে ধাপে মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে নিতে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছিল এবং তখন আর কোনো রাস্তা খোলা ছিল না।
৫ আগস্টের কথা স্মরণ করে অভিনেত্রী বলেন, “যারা সেদিন, ৫ আগস্ট রাস্তায় ছিল না, তারা কোনো দিন বুঝতে পারবে না সেই আনন্দ কতটা বিশুদ্ধ ছিল— যখন সে ভীতুর মতো দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। সেই আনন্দ ছিল একদম বাস্তব, এবং আমি তা নিজের প্রতিটি হৃদস্পন্দনে অনুভব করেছিলাম।” তিনি মনে করেন, ওইরকম স্বাধীনতা আর শক্তি রাস্তায় দাঁড়িয়ে একসঙ্গে অনুভব করার অভিজ্ঞতা জীবনে একবারই আসে।
সবশেষে বাঁধন লিখেছেন, “হ্যাঁ, বিপ্লবের পরে অনেক কিছু ঘটেছে, এবং সবকিছু সুখকর হয়নি। কিন্তু এক জিনিস স্পষ্ট: জুলাই বিপ্লব সঠিক সময়ে, সঠিক কাজ ছিল।”
স্বাআলো/এস