অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে ‘পঙ্কিল রাজনীতি’ পরিহারের জন্য দৃঢ় আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক বিশ্বাস ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত এবং তা বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহর্দির মধ্যে আনা ঠিক নয়।
সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ১৯তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন, রিসার্চ ফেয়ার এবং একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইলের সভাপতিত্বে শিক্ষা উপদেষ্টা আবরার শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, আমার রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকতে পারে। কিন্ত সে রাজনৈতিক বিশ্বাস,বিশ্বাসের পর্যায়ে থাকবে। সেই রাজনীতি আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহর্দির মধ্যে আনবো না। সেখানে আমি সকল ছাত্রের প্রতি দায়িত্ব যেটা সেটা আমি পালন করব।
তিনি আরো বলেন, কেউ যদি মনে করে আমি রাজনীতি করব। অবশ্যই আপনি রাজনীতির অঙ্গনে চলে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা আপনি ছেড়ে দেন। কারণ রাজনীতিতে ভালো যোগ্য লোকের দরকার আছে। সেখানেও আপনি সম্মান পাবেন। কিন্ত পঙ্কিল রাজনীতি আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্ত্বরে আনবেন না। এ হচ্ছে আমাদের আহ্বান। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সামনের দিন গুলো রাজনৈতিক সরকার আসবে তারা বিষয় গুলোকে বিবেচনায় আনবে।
নিজের দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ড. আবরার শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আমি ৪০ বছর নিষ্ঠার সাথে শিক্ষকতা করেছি। জ্ঞানত আমি কখনো ফাঁকি দেয়নি… কিন্ত যখনই আমি দেখেছি,আমারই বন্ধু,বান্ধব টিচার্স লাউঞ্জে বসে। তাদের ৩০-৪০টা ক্লাস নেওয়ার কথা। তার মধ্যে তারা ৪-৫টা ক্লাস নিচ্ছে। পরে তারা বাকী ক্লাস নিচ্ছেন না… এ ধরনেরও আমরা দেখেছি।
তিনি শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যে শিক্ষক রিকোয়েন্টমেন্ট। সেখানে শিক্ষক রিকোয়েন্টমেন্ট হতো না। সেখানে ভোটার রিকোয়েন্টমেন্ট হতো। আমি বিশ্বাস করতে চাই, এই ধরনের একটা বাস্তবতা, আমরা পার হয়ে আসতে চাই। কাজেই নতুন ভাবে আমাকে সব কিছু ঢেলে সাজাতে হবে।
উপদেষ্টা আবরার শিক্ষকদের নীতিবোধ সমুন্নত রাখার এবং নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমরা যদি আশা করি আমাদের ছাত্ররা নিয়মিত ক্লাস করবে,আমরা যদি আশা করি তারা মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে, ফলে সেই পরিবেশ আমাকে সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে অবশ্যই আমাদের শিক্ষকদের যে নিজস্ব যে নীতিবোধ সেটাকেও অনেক সমুন্নত রাখতে হবে। শিক্ষক হিসেবে আমার যে দায়িত্ব সেই দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল ফারুক সহ বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ, ইনস্টিটিউটের পরিচালকবৃন্দ, বিভাগের চেয়ারম্যানবৃন্দ, হলের প্রভোস্টবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, নোবিপ্রবির ১৯তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনকে ঘিরে এই প্রথমবারের মতো রিসার্চ ফেয়ার উদ্বোধন করা হয় এবং রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড, ডিনস অ্যাওয়ার্ড ও ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ও প্রতিষ্ঠায় যারা অবদান রেখেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিকেলের সেশনে বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির রিসার্চ প্রেজেন্টেশন এবং সবশেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাআলো/এস