চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের চৌগাছায় নূরী বেগম (২৮) নামে এক গৃহবধূ হাতের তালু ও চিরকুট লিখে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
তিনি উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের টেঙ্গুরপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী।
দিনমজুর শহিদুল ইসলাম চৌগাছা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের হালদারপাড়ার বাসিন্দা হলেও স্ত্রী নিয়ে টেঙ্গুরপুর গ্রামে একটি টিনশেডের বাড়ি করে বসবাস করতেন।
নারীটির হাতের তালু ও কাগজে লাল কালিতে লেখা ছিলো ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না সন্তান না হবার কারনে আমি গলাই দড়ি দিলাম,’ একই কাগজের অন্য প্যারায় লাল কালিতে লেখা, ‘দুনিয়া বড় কঠিন আমি সব কিছু ছেরে চলে গেলাম’। কাগজটির অপর পিঠে কালো কালি দিয়ে লেখা, ‘এই তোমার এই নাক বুছিরে কেন ভালোবাসো কেনো বিয়ে করতে চাও।’
শনিবার (১ জুন) গ্রামে স্বামীর টিনশেড ঘরের আড়া থেকে নূরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে প্রতিবেশীরা।
নূরীর স্বামী শহিদুল ইসলাম জানান, প্রায় ১২ বছর আগে তিনি মহেশপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের আজগর আলীর মেয়ে নূরীকে বিয়ে করেন। এতোদিনে তাদের কোনো সন্তান জন্ম না নিলেও এনিয়ে তাদের কোনো আক্ষেপ ছিলো না।
শহিদুল আরো জানান, কয়েক মাস আগে তার পোষা একটি ছাগলের অসুখ হয়। সেটি দেখার জন্য পাশ্ববর্তী হাজরাখানা গ্রামের আসাদ নামে এক গ্রাম্য পশু চিকিৎসক তার বাড়িতে আসেন। এরপর থেকে আসাদের সাথে তার স্ত্রীর পরকীয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে মনোমালিন্য হলে স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে যান। সেখান থেকে সপ্তাহ খানেক আগে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে শহিদুলকে ডিভোর্স লেটার পাঠায় নূরী। তবে শহিদুল ডিভোর্স লেটারটি গ্রহণ করেননি। পরে শহিদুল নূরীর বাবার বাড়িতে গেলে নূরী শুক্রবার (৩১ মে) সন্ধ্যায় শহিদুলের সাথে স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন। শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে শহিদুল চৌগাছা বাজারে নিজের কর্মস্থলে চলে যান। সেখানে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে মোবাইলে সংবাদ পান স্ত্রী নূরী ঘরের আড়ার সাথে ঝুলছে। বাড়ি ফিরে দেখেন প্রতিবেশিরা নূরীর লাশ নামিয়ে ঘরের বারান্দায় রেখেছে।
শহিদুল আরো বলেন, এরপর দেখি একটি কাগজে লাল কালি দিয়ে নূরী লিখে রেখে গেছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না সন্তান না হবার কারনে আমি গলাই দড়ি দিলাম,’ একই কাগজের অন্য প্যারায় লাল কালিতে লেখা, ‘দুনিয়া বড় কঠিন আমি সব কিছু ছেড়ে চলে গেলাম’। কাগজটির অপর পিঠে কালো কালি দিয়ে লেখা, ‘এই তোমার এই নাক বুছিরে কেনো ভালোবাসো কেনো বিয়ে করতে চাও।’ একই লেখা লাল কালি দিয়ে নূরীর বাম হাতের তালুতে লেখা রয়েছে।
স্বামী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে সে একাধিকবার বলেছে ‘আমি আসাদ ডাক্তারকে ভালোবাসি, আমি তাকে বিয়ে করবো। ডাক্তার আমাকে চৌগাছার দোতলা (চৌগাছা শহরের নিরিবিলি পাড়ায় আসাদ একটি দ্বিতল বাড়ি করেছেন) বাড়িতে রাখবে।’ সে আমাকে ডিভোর্স লেটারও পাঠিয়েছে। কিন্ত আমি নিইনি। আমিতো ওকে ১২ বছর ধরে ভালোবাসি।’ বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন শহিদুল।
স্থানীয়রা বলেন, শহিদুল নিরীহ ছেলে। চৌগাছা শহরে একটি পানের পাইকারি দোকানে দিন মজুরির কাজ করে সে। পশুডাক্তার আসাদই ওদের সংসারটা শেষ করে দিলো। টেঙ্গুরপুর এবং হাজরাখানা গ্রামের জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের কাছে আসাদের সাথে ওই নারীর পরকীয়ার বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। এমনকি উভয় গ্রামের লোকজন, আসাদের পরিবারের সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরা জানেন আসাদ নূরীকে বিয়ে করেছেন। তবে এ বিষয়ে কেউ উদ্ধৃত হয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
প্রতিবেশীরা বলেন, দোটানায় ভুগে, হতাশায় ও লোকলজ্জায় মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। এজন্য আসাদ ডাক্তারের বিচার হওয়া উচিত।
পশু চিকিৎসক আসাদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওই নারী (নূরী) পরিবারের বিভিন্ন সদস্যকে মোবাইল করে বলেন, আমি আসাদকে বিয়ে করেছি। আসাদের পরিবারের সদস্যরা তার কাছে বিয়ে এবং আগের স্বামীর সাথে ডিভোর্সের কাগজপত্র চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি। এরপরই তিনি শহিদুলকে ডিভোর্স লেটার পাঠান।
সূত্রটি আরো জানায়, আসাদের প্রথম স্ত্রীর ঘরে দুইটি সন্তান রয়েছে। তবে প্রথম স্ত্রী শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। এই সুযোগে আসাদ বিভিন্ন নারীকে প্রলোভনে ফেলে ভোগ করে আসছিলো। নূরীকেও সে একইভাবে প্রলোভনে ফেলে ভোগ করেন এবং প্রলোভন দেখান তাকে বিয়ে করে চৌগাছা শহরের দ্বিতল বাড়িতে রাখবেন।
এবিষয়ে পশু চিকিৎসক আসাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার পরিবারের একাধিক সদস্য জানান, তারা আসাদের সাথে ওই নারীর পরকীয়া ও বিয়ের ঘটনা লোকমুখে শুনেছেন।
এবিষয়ে আসাদের গ্রাম হাজরাখানার ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মিলন ও টেঙ্গুরপুর গ্রামের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন খান বলেন, পশু চিকিৎসক আসাদের সাথে পরকীয়া ও বিয়ের বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি।
চৌগাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমান আত্মহত্যার ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হবে। তদন্তের আগে এর বেশি বলা যাচ্ছে না।
স্বাআলো/এস
