ম্যানেজিং কমিটির নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলের প্রতিযোগিতা

জেলা প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা: জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ম্যানেজিং কমিটির কর্তৃত্ব নিয়ে চর দখলের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলের প্রতিযোগিতা ও একাধিক গ্রুপের দ্বন্দ ছড়িয়ে পড়ায় চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে।

একই দলের বিবাদমান দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১৬ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদ দখলের এই প্রতিযোগিতার মূলে রয়েছে প্রধান, সহকারী প্রধান, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, জমি ইজারা ও এলাকায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা। এরা মুলত কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করছে না, ফলে প্রকৃত শিক্ষানুরাগীরা প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দূরে সরে যাচ্ছে। এই সুযোগে এসব কর্তৃত্ববাজরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে প্রধান শিক্ষকের পাশাপাশি স্বতন্ত্র চেয়ার টেবিল নিয়ে নিয়মিত অফিস করছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে মঙ্গলবার জেলার মহাম্মদজমা ডিএএসএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের জন্য নির্বাচনের লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মানিক ও সদর সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুয়েল রানার সমর্থকদের মনোনয়নপত্র জমাকালে সংঘর্ষে ১৬ জন সমর্থক আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।

আগের মাসে দামুড়হুদা উপজেলার কুতুবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনুরুপ সংঘর্ষের ঘটনায় ১০ জন আহত হয়। মে মাসে জীবননগর উপজেলার পাকা দারুস সালাম দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে প্রায় ২০ জন আহত হয়।

সদর উপজেলার বেগমপুর দাখিল মাদরাসার সুপার আরেফউল্লাহ জানান, গত জানুয়ারি মাস থেকে সভাপতি রিপন হোসেনের কাছে থাকা জমি ইজারার ৬৬ হাজার টাকা মাদরাসার ফাণ্ডে জমা দিতে বলেন। ঘটনাক্রমে একই সময় সুপার আরেফউল্লাহ মাদরাসার আয়া সেলিনা খাতুনকে অবাধ্যতার অভিযোগে কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে শোকজ করেন। সভাপতি এটাকে পুঁজি করে আয়ার সাথে অনৈতিক আচরণ ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে সাময়িক বরখাস্ত করলে তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার ঝড় ওঠে।

বিষয়টি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পর্যন্ত গড়ালে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন।

এ ঘটনায় অনেকে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের গাফলতিকেও দায়ী করেন। ম্যানেজিং কমিটির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে গত এপ্রিল মাসে সাধারন শিক্ষা বোর্ডগুলো অশিক্ষিতের পরিবর্তে কমপক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক পাস সভাপতি হবার যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিলেও অজ্ঞাত কারনে অদ্যবধি মাদরাসা বোর্ড তা আমলে নেননি, ফলে আষ্টম /৪র্থ শ্রেণী অনুত্তীর্ণ ব্যক্তিরাও চলতি মাসে সভাপতিসহ কমিটির সদস্য হবার সুযোগ পেয়েছে।

অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা সদরের হিজলগাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নিজেই বিদ্যালয়ে অফিস খুলে শিক্ষকদের পাশাপাশি নিয়মিত অফিস করেন। এতে করে সকল কাজে তিনি হস্তক্ষেপ করায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষকরা। অথচ নীতিমালায় কোথাও সভাপতির স্বতন্ত্র অফিসের বিধান নেই।

বেগমপুর মাদরাসার সুপার মাওলানা আরেফউল্লার অন্যায়ভাবে সাময়িক বরখাস্ত্রের ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সাহার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুপার আরেফউল্লার ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। জুন মাসের ব্যস্ততা, এ মাসে ট্রেনিংয়ের ব্যস্ততা ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ব্যস্ত থাকার কারনে এখনো তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। খুব তাড়াতাড়ি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান বলেন, আমাদের অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অশিক্ষিত সভাপতি নির্বাচিত হচ্ছে। যার কারণে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এসব ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিতে উচ্চ মাধ্যমিক পাস যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিলে এধরনের সমস্যা হবে না।

সভাপতি স্কুলে অফিস করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো সভাপতি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জোর করে অফিস করে এটা ঠিক না।

স্বাআলো/এস