সম্পাদকীয়

ঈদ মোবারক

| April 11, 2024

সম্পাদকীয়: ঈদ হলো মুসলমানদের জন্য শরিয়ত সম্মত দুইটি আনন্দ উৎসবের দিন। একটি হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর, আরেকটি হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা।

ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় একটি বৃহত্তম উৎসব। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে রোজাদারদের জন্য বিশেষ পুরস্কারও।

ঈদের তাৎপর্য অপরিসীম। ঈদের নামাজের শেষে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে বলতে থাকেন, হে আমার প্রিয় বান্দারা আমি আজকের এ দিনে তোমাদের সকল পাপ গুলোকে পুণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দিলাম। অতএব তোমরা নিষ্পাপ হয়ে বাড়িতে ফিরে যাও। (বায়হাকি ও মিশকাত )

মহানবী (সা) এরশাদ করেন, ঈদের আনন্দ শুধু তাদের জন্য যারা রমজানের রোজা, তারাবিসহ যাবতীয় আল্লাহর বিধি-বিধান গুরুত্ব সহকারে আদায় করেছে। আর যাহারা রমজানের রোযা ও তারাবিহ আদায় করেনি তাদের জন্য ঈদের আনন্দ নেই, বরং তাদের জন্য ঈদ তথা আনন্দ অগ্নিশিখা সমতুল্য। (বুখারি)

মহানবী (সা.) হাদিসের মধ্যে আরো ইরশাদ করেন যে, যারা রমজানে রোযা রাখেনি তারা ঈদের নামাজে সুসংবাদ প্রাপ্ত মানুষের কাতারে শামিল হবে না। তাদের জন্য কোনো আনন্দ নেই। আর যারা রোজা পালন করেছে, গরিবদেরকে নিজের মাল থেকে ফিতরা দিয়েছে শুধুমাত্র ঈদ তাদের জন্যই। তবে যাদের রোজা রাখার বয়স হয়নি অথবা বিশেষ কোনো কারণে রোজা রাখতে পারেনি তারাও ঈদের এই আনন্দে শরীক হতে পারবে। কিন্তু যারা বিনা কারণে এবং অলসতা করে রোজা রাখেনি তাদের জন্য এ ঈদে আনন্দ নেই। এ ঈদ তাদের জন্য আনন্দ স্বরূপ নয়, বরং তিরষ্কার স্বরূপ। (মুসলিম)

মহানবী (সা.) আরো এরশাদ করেন যে, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে পূণ্যের প্রত্যাশায় ইবাদত-বন্দেগী করে কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার, অর্থাৎ কিয়ামতের দিন অন্যান্য লোকদের অন্তর মরে যাবে, কিন্তু কেবল সেই ব্যক্তির অন্তর জীবিত থাকবে, সেদিনও মরবে না।-(আতরাগিব) রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পূণ্যময় ৫টি রাতে ইবাদত-বন্দেগী করে সেই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ রয়েছে, আর সেই সুসংবাদটি হচ্ছে ‘জান্নাত’।

পূণ্যময় ৫টি রাত হলো: ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, শবে বরাত, জিলহজের রাত ও আরাফাতের রাত। (বায়হাকি)

হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, এক দিন নবী করিম (সা.) হিজরত করে মদিনায় তাশরিফ নিয়ে দেখতে ফেলেন মদিনাবাসীরা, ‘নববর্ষ ও মেহেরজানের’ দু’টি উৎসব পালন করছে, তখন মহানবী (সা.) তাদেরকে জিজ্ঞাস করলেন তোমরা এ দু’দিনে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠ কেন? মদিনার আনসার এবং নওমুসলিমগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল আমরা জাহেলী যুগে এ দু’দিনে আনন্দ উৎসব করতাম, যা আজ পর্যন্তও প্রচলিত। তখন রাসুল (সা.) তাদেরকে বললেন, আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদেরকে সেই দুইটি উৎসবের পরিবর্তে দুইটি উৎসব তোমাদেরকে দান করেছেন। সে দুইটি উৎসব হচ্ছে, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। (আবু দাউদ )

ঈদের দিনে অনেক সুন্নাত রয়েছে, ঈদের দিনে শরিয়তের সীমা রেখার ভেতর থেকে যথাসাধ্য সাজ-সজ্জা করা এবং খুশি করা। গোসল করা। সাধ্য অনুযায়ী উত্তম পোশাক পরিধান করা। মিসওয়াক করা। খুব প্রত্যুষে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। ফজরের নামাজ পড়েই খুব সকালে ঈদগাহে যাওয়া। ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে খোরমা বা অন্য কোনো মিষ্টি দ্রব্য ভক্ষণ করা, সম্ভব হলে সেমাই, মিষ্টি জাতীয় পিঠা খাওয়া । ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সাদকায়ে ফিতর আদায় করা । ফিতরা আদায়ের লক্ষ্য হলো এই মহান দিনে যাতে দারিদ্র্যপীড়িত কেউ অনাহারের কারণে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়। এ কারণেই ঈদের আগেই ফিতরা আদায়ের নির্দেশ রয়েছে। ঈদের নামাজ ঈদগাহে মাঠে গিয়ে পড়ার সময় ধনী-দরিদ্র এক কাতারে পাশাপাশি দাঁড়াবে । এ ক্ষেত্রে ধনী বলতে পারবে না আমি গরিবের পাশে দাঁড়াবো না। এই বিধান মুসলমানদের ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয়। ঈদের এই বড় শিক্ষায় মুসলমানরা আলোকিত হোক এ কামনা করি।

স্বাআলো/এস

Debu Mallick