এশিয়ান কাপ ফুটবলের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ইতিহাস গড়ে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। প্রথম বারের মতো এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলবে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়নরা। মিয়ানমার থেকে এই ঐতিহাসিক কীর্তি গড়ে দেশে ফেরার দিনই (রবিবার) গভীর রাতে বাফুফের পক্ষ থেকে এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
রাজধানীর হাতিরঝিলের এম্ফিথিয়েটারে এই অনুষ্ঠান গভীর রাতে শুরু হয়ে চলে। রাত আড়াইটায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, থাইল্যান্ড হয়ে ফিরতে ফ্লাইটের বিলম্ব এবং শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফুটবলাররা হাতিরঝিলে পৌঁছান রাত তিনটার পর। ফলে অনুষ্ঠান শুরু হতে গড়ান সোয়া তিনটা।
মধ্যরাত পেরিয়ে রাত তিনটা হলেও বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের এই কীর্তিকে সম্মান জানাতে হাতিরঝিলের এম্ফিথিয়েটারে ছুটে এসেছিলেন অনেক দর্শক ও সমর্থক। সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীও উপস্থিত ছিলেন। শুনশান নীরবতার মধ্যে আলো ঝলমলে পরিবেশে এক ভিন্ন রকম আবহের সৃষ্টি হয়।
অনুষ্ঠানে ফুটবলারদের একে একে মঞ্চে ডেকে সংবর্ধনা জানানো হয়। কোয়ালিফাইড লেখা বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে তারা ছবি তোলেন। ফুটবলারদের পক্ষ থেকে অধিনায়ক আফিদা ও তারকা ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। পরবর্তীতে কোচ পিটার বাটলার ও বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বক্তব্য রাখেন।
অধিনায়ক আফিদা খন্দকার বলেন, ‘খুবই ভালো লাগছে। এই মুহূর্ত কখনো ভোলার মতো নয়। সকলে আমাদের জন্য দোয়া করবেন আমরা যেন আরও ভালো কিছু করতে পারি। শুধু দক্ষিণ এশিয়া, এশিয়া নয়, আমরা যেন বিশ্বমঞ্চে দেশকে আরও অনেকদূর নিয়ে যেতে পারি।’
মিয়ানমারের বিপক্ষে জোড়া গোল করে বাংলাদেশের এশিয়ান কাপ নিশ্চিত করার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ঋতুপর্ণা চাকমা। তিনি বলেন, ‘ফুটবল কোনো ব্যক্তিগত খেলা নয়। আমরা বাংলাদেশের মেয়েরা জানি কীভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করতে হয়। আমাদের প্রতি বিশ্বাস রাখবেন। আমরা আপনাদের নিরাশ করব না। শুধু এশিয়া নয়, বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে চাই আমরা।’
বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের বক্তব্যের সময় সবার বাড়তি আকর্ষণ ছিল, নারী ফুটবলারদের জন্য বিশেষ কোনো আর্থিক ঘোষণা আসবে কিনা। তবে সভাপতির বক্তব্যে মূল সারাংশ ছিল দলের প্রতি বাফুফের সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি। তিনি বলেন, ‘আমরা নারী দলের পেছনে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব। আমরা আপনাদের ওপর আস্থা রাখছি এবং প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনাদের পেছনে আমরা আছি।’
যদিও সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাফুফে গত বছর ৯ নভেম্বর দেড় কোটি টাকা আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, সেই অর্থ এখনো নারী ফুটবলারদের হাতে পৌঁছায়নি। নারী ফুটবলারদের মধ্যে ঋতুপর্ণারা কয়েকজন মাত্র মাসে ৫৫ হাজার টাকা সম্মানি পান। দেশে ঘরোয়া লিগের অভাব থাকায় নারী ফুটবলারদের আর্থিক দুর্দশা প্রকট। এশিয়ান কাপ নিশ্চিত করার মতো এত বড় অর্জনের পরও বাফুফে সভাপতির কাছ থেকে আর্থিক কোনো ঘোষণা না আসায় পুরো অনুষ্ঠানের আলো কিছুটা ম্লান হয়েছে।
স্বাআলো/এস