খুলনা বিভাগ

সাতক্ষীরায় ৬৫ বছরের ভোগ দখলীয় জমি রাতের আঁধারে জবর দখলের চেষ্টা

| August 2, 2024

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা: সশস্ত্র ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় প্রতিপক্ষের ৬৫ বছরের দখলীয় জমি বেড়া দিয়ে জবর দখলের চেষ্টা করা হয়েছে।

বাধা দেয়ায় নিমাই ঘোষ ও কনেক ঘোষসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়েছে।

বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের মাছিয়াড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মাছিয়াড়া গ্রামের কৃষ্ণপদ ঘোষের ছেলে কণক ঘোষ জানান, তার জ্যাঠা মহাশয় ভোলানাথ ঘোষ ১৯৪৫ সালের ৮ অক্টোবর মাদারী দাসীর কাছ থেকে ৪৩০১ নং রেজিষ্ট্রি কোবালামূলে মাছিয়াড়া মৌজার ১৯৬৫ সহ ছয়টি দাগে ছয় একর জমির মালিক হন। পরবর্তীতে ভোলানাথ ঘোষের ওই জমি ভোলানাথসহ (১ দশমিক ৭ একর) ভাই কৃষ্ণপদ ঘোষ (১দশমিক ৭) ও পঞ্চনন ঘোষের (১ দশমিক ৪ একর) নামে এসএ রেকর্ড হয়। পঞ্চানন ঘোষ নিঃসন্তান হওয়ায় ওই জমি ভোলা নাথের পাঁচ ছেলে ৫২ শতক ও কৃষ্ণপদ ঘোষের দুই ছেলে কনক ঘোষ ও নিমাই ঘোষ ওয়ারেশ সূত্রে মালিক হন। এরপর থেকে তিনি (কণক) ও তার ভাই নিমাই ওই জমিতে পুকুরে মাছ, গাছ গাছালি ও ধান লাগিয়ে ভোগ দখলে আছেন। মাঠ পর্চায় ঠিক থাকলেও বিআরএস জরিপের চুড়ান্ত মাপ চলাকালীন সময়ে হাল ২৩৪০ দাগের ৩৩ শতক, ২৩৪১ দাগের ৬৫ শতক ও ২৩৫৫ দাগের ৬ শতক জমি ভ‚লবশতঃ ১/১ খাস খতিয়ানে চলে যায়। যার অর্ধেক তিনি (কণক) ও তার ভাই নিমাই ঘোষ পুকুরে মাছ, খেতে সবজি ও গাছ লাগিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোগ দখলে আছেন। খলিলনগর ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসের তহশীলদার সোহরাব হোসেন এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, ওই জমির অর্ধেকাংশ কৃষ্ণপদ ঘোষের দুই ছেলে চলতি বাংলা সন পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করে আসছেন। ৮৮/২০২৩ মিসকেস মূলে ওই জমি রেকর্ড সংশোধনের জন্য বিবেচনাযোগ্য বলে প্রতীয়মান হয়। শরীকদের সাথে সুসম্পর্ক না থাকায় তার ও ভাই নিমাই ঘোষের ৫২ শতক জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য সাতক্ষীরা ল্যাÐ সার্ভে ট্রাইব্যুনালে গত ২৭ জুন ৫২৪/২৪ নং মামলা করেছেন তিনি। তবে ওই জমি নিজেদের দখলে দাবি করে ভোলানাথ ঘোষের ছেলে ষষ্ঠীপদ ঘোষ পাঁচ ভাইয়ের পক্ষ থেকে গত বছরের ১৯ ফেব্রæয়ারি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পিটিশন ৩৫২/২৩ নং মামলা করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে খলিলনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার ওই জমি তাদের দখলে (কনক) বলে উল্লেখ করেন। সে কারণে মামলার রায় তাদের পক্ষে যায়। তবে সমুদয় জমির (১দশমিক ০৪ একর)দখল স্বত্ব নিয়ে ভোলানাথ ঘোষের ছেলে ষষ্ঠীপদ ঘোষ গত বছরের পহেলা ফেব্রূয়ারি তালা সহকারি জজ আদালতে দেঃ ২৮/২০২৩ নং মামলা করেন।

কণক ঘোষ অভিযোগ করে বলেন, তিনি ল্যান্ড সার্ভে আদালতে খাস হওয়া জমি রেকর্ড পাওয়ার মামলা করলে ভোলানাথ ঘোষের ছেলেরা ওই তাদের ৫২ শতক জমি জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলো। তারা সেটেলমেন্ট থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে রেকর্ড করিয়ে নিয়েছে দাবি করে গেজেটে তা অর্ন্তভুক্ত করতে না পারায় খাজনা দিতেও ব্যর্থ হয় বলে স্থানীয়ভাবে জানা যায়। একপর্যায়ে দখলের হুমকি দিলে তিনি চলতি বছরের ৮ মার্চ তালা থানায় ৩০৯ নং সাধারণ ডায়েরি করেন। একইভাবে গত ২৩ মার্চ মন্দিরের জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিলে লোহার রড দিয়ে ভাইপো তীর্থ ঘোষের মাথা ফাটিয়ে দেয়া ও তার মোটর সাইকেল ভাঙচুরের ঘটনায় পরদিন সুনীল ঘোষসহ আটজনের নামে মামলা (১৬নং) দায়ের করে তীর্থ ঘোষ।

তীর্থ ঘোষ জানান, বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে পুকুরের মাছ পাহার দিতে টর্চলাইট মারলে তার জ্যাঠা মহাশয় কণক ঘোষ দেখতে পান যে, ষষ্ঠীপদ ঘোষের ছেলে সুনীল ঘোষ, শংকর ঘোষ, অনাথ ঘোষ, অখিল ঘোষ, জয়দেব ঘোষ, রবিন ঘোষ ও উত্তম ঘোষসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা অন্য জায়গা থেকে নির্মাণ করে নিয়ে আসা বাঁশের বেড়া দিয়ে তাদের (কণক ও নিমাই) ১৩ শতক জমিসহ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ৩৯ শতক জমির মধ্যে থাকা পুকুরের পশ্চিম পাশে (পাকা রাস্তার পূর্ব দিক) ঘিরে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য মেহেদী হাসান, স্থানীয় রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজনকে অবহিত করা হয়। একপর্যায়ে ৯৯৯ এ ফোন দিলে তিন ঘণ্টা পর শুক্রবার ভোরে স্থানীয় খলিলনগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক শহীদুল হক ঘটনাস্থলে এলেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

শুক্রবার সকালে মাছিয়াড়া গ্রামে দেখা গেছে কণক ঘোষ ও নিমাই ঘোষের প্রায় ৬৫ বছরের দখলীয় জমি জবর দখলের জন্য পুকুরের পশ্চিমপাশে বেড়া দেওয়ার কাজ করছেন সুনীল ঘোষ, শংকর ঘোষসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা। তাদেরকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য হাতে রাম দা ও লাঠি নিয়ে রাস্তার দুই পাশে পাহারা দিচ্ছেন ২০/২৫ জন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী। ছবি তুলতে গেলে সুনীল ঘোষ জানান, এ জমি তারা সেটেলমেন্ট অফিস থেকে রেকর্ড পেয়েছেন। গেজেট কি হবে? তাই তাদের জমিতে তারা বেড়া দিলে ছবি তুলতে হবে কেন? এ সময় স্থানীয় রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের পক্ষ নেয়ায় সেখান থেকে কোনো রকমে চলে আসা সম্ভব হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভোলা নাথ ঘোষের কয়েকজন ছেলে ও তাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা প্রতিদিন স্থানীয়ভাবে দুধ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে থাকেন। তবে তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে গাজা সেবন ও জুয়া খেলার অভিযোগ রয়েছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

স্থানীয় রফিকুল ইসলাম ও খলিলনগর ইউপির ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য মেহেদী হাসান জানান, ভোলা ঘোষের ছেলেরা ওই জমি জবর দখলের চেষ্টা করলে এ নিয়ে কয়েকবার বসাবসি হয়েছে। এরপরও তারা শালিসি সিদ্ধান্ত না মেনে বৃহষ্পতিবার গভীর রাতে বেড়া দিয়ে কণক ও নিমাই ঘোষের দীর্ঘদিনের দখলীয় জমি দখলের চেষ্টা করছে।

এ ব্যাপারে খলিলনগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক শহীদুল হক জানান, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে জানানোর পর শুক্রবার ভোরে তিনি বিরোধপূর্ণ জমিতে যান। সেখানে সুনীল ঘোষ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা কণক ঘোষ ও নিমাই ঘোষের দখলে থাকা জমি অন্য জায়গা থেকে নিয়ে আসা বেড়া দিয়ে পুকুরের পশ্চিম পাশে ঘিরেছেন। ওই সময়ে কোনো দখলদার উপস্থিত ছিলো না। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

স্বাআলো/এস

Debu Mallick