Uncategorized

‘মধুর ফাঁদ’ পাতছে কারা? যেভাবে হানি ট্র্যাপের শিকার হতে পারেন আপনিও

| April 26, 2025

সম্প্রতি মডেল ও অভিনেত্রী মেঘনা আলমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘হানি ট্র্যাপ’ শব্দটি ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। যদিও শব্দটি অনেকের কাছে পরিচিত নয়, তবে এটি এক ভয়ঙ্কর অপকৌশল যা বহু আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশ্বজুড়ে সিনেমা, ওয়েব সিরিজ এমনকি সাহিত্যেও এর উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়।

‘হানি ট্র্যাপ’ আসলে কী?

‘হানি ট্র্যাপ’ একটি ইংরেজি শব্দগুচ্ছ, যার বাংলা আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায় ‘মধুর ফাঁদ’। একে অনেকে ‘ভালোবাসার ফাঁদ’ও বলে থাকেন। এটি মূলত একটি প্রতারণামূলক কৌশল যেখানে কাউকে যৌনতা, প্রেম বা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য থাকে ব্ল্যাকমেইল করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেওয়া, মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা অথবা টার্গেট ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে হেয় করা বা বিপদে ফেলা। সাহিত্যে এই শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৭৪ সালে, জন লে ক্যারের বিখ্যাত গোয়েন্দা উপন্যাস ‘টিঙ্কার, টেইলর, সোলজার, স্পাই’-এ।

কারা থাকেন টার্গেটে?

যেহেতু এটি নিছক কোনো মজার বিষয় নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, তাই এর টার্গেটও হন বিশেষভাবে নির্বাচিত ব্যক্তিরা। সাধারণত বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, কূটনীতিক, রাষ্ট্রদূত, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই ‘হানি ট্র্যাপ’-এর শিকার হন বেশি।

ফাঁদ পাতা হয় যেভাবে

অপরাধী চক্র সাধারণত অভিজাত এলাকা, নামিদামি বার, হোটেল বা ক্লাবে ওত পেতে থাকে। সেখানে যাতায়াতকারী সম্ভাব্য টার্গেটদের ওপর নজরদারি করে, তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করে এবং সুযোগ বুঝে ফাঁদ পাতে। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও ধারণ করে পরবর্তীতে তা প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হয়।

তবে সময়ের সাথে সাথে হানি ট্র্যাপের ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ডেটিং অ্যাপস এবং বিভিন্ন অ্যাডাল্ট সাইটগুলো হানি ট্র্যাপের অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। এসব প্ল্যাটফর্মে ভুয়া পরিচয়ে সম্পর্ক গড়ে তুলে অন্তরঙ্গ ভিডিও চ্যাট বা ছবি আদান-প্রদান করা হয় এবং পরে তা ফাঁস করার হুমকি দিয়ে অর্থ আদায় বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য হাসিল করা হয়। কখনো কখনো এই চক্র কোনো পক্ষের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ফাঁসিয়ে দেয়। বাংলাদেশে সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূত এবং ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ার আজীম আনার এই হানি ট্র্যাপের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে।

অতীত ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং পরবর্তী স্নায়ুযুদ্ধের সময় প্রতিপক্ষের কাছ থেকে গোপন তথ্য বের করার জন্য তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পশ্চিমা দেশগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে হানি ট্র্যাপ কৌশল ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধেও হানি ট্র্যাপ ব্যবহারের অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞের মত

দেশের শীর্ষস্থানীয় অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ উমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, হানি ট্র্যাপ অবশ্যই একটি প্রতারণামূলক অপরাধ। সংঘবদ্ধ অপরাধীরাই সাধারণত এমন ফাঁদ পাতে এবং এর পেছনে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক শক্তি কাজ করে। যাদের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব রয়েছে, তারাই এ ধরনের প্রতারণার শিকার বেশি হন।

তিনি আরো বলেন, এই মধুর ফাঁদ থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রধান উপায় হলো সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই সচেতনতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

হানি ট্র্যাপ কখনো কখনো কোনো সত্য উদ্ঘাটনে সাহায্য করলেও, অনেক ক্ষেত্রেই নিরপরাধ মানুষ ক্ষণিকের ভুলে এই ফাঁদে পা দিয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, যা তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে। তাই এ বিষয়ে সতর্কতা ও সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

স্বাআলো/এস

Shadhin Alo