শেষ মুহুর্তে ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা তৈরির কারিগররা

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট: হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সর্ব বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা। চন্ডি পাঠ ও দেবী দুর্গার বন্দনার মাধ্যমে সূচনা হলো মহালয়ার মাধ্যেমে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হতে আরো ছয়দিন বাকী থাকলেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দরজায় কড়া নাড়ছে দেবী- দূর্গার আগমনী বার্তা। ইতোমধ্যেই লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বিশেষ করে দুর্গা প্রতিমা তৈরির কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছে। প্রতিমা তৈরি শেষ এখন শুরু হবে রঙের কাজ। মণ্ডপের সাজসজ্জাসহ সার্বিক প্রস্তুতি দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছেন আয়োজক ও পূজা উদযাপন কমিটি।
শরতের কাশফুল আর প্রতিমা তৈরিতে কারিগরদের ব্যস্ততা জানিয়ে দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। এখন শুধু অপেক্ষা ঢাকে কাঠির বারি পড়ার। মালির হাত ও কামকাঠির নিপুণ ছোয়ায় ফুটে উঠছে প্রতিমার রূপ!
আগামী ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হবে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। কালীগঞ্জ উপজেলায় এ বছরে ৯১টি মণ্ডপে দুর্গা প্রতিমা বসবে। তারই সাজসজ্জায় ব্যস্ত আয়োজকরা। শারদীয় উৎসব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা।
চলবলা ইউনিয়নের শিয়ালখোওয়া বাজার এলাকার কারিগররা কাদা-মাটি, খড়-কাঠ সংগ্রহ থেকে শুরু করে, প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সকাল থেকে রাত অবধি চলছে এই কার্যক্রম। এখন শারদীয় দুর্গোৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
এ উৎসবকে ঘিরে উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে দেখা দিয়েছে কর্ম ব্যস্ততা।দিন রাত কাজ করে শিল্পীদের হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। যেন দম ফেলার সময় নেই কারিগরদের। তবে রং, তুলির ও সাজসজ্জার দাম বেশি হওয়া ও প্রতিমা বানানোর মজুরি একটু কম পাওয়ায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে তাদের মধ্যে।
কালীগঞ্জ থেকে আসা প্রতিমা শিল্পী শ্রী সুজন দাস বলেন, আমি ১৩ বছর যাবত প্রতিমা তৈরি করি। দূর্গা প্রতিমা ছাড়াও সকল ধরনের প্রতিমা বানিয়ে থাকি। এবার আমি তিনটা প্রতিমার কাজ করতেছি। ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায় কন্টাকে, আমার সাথে দুই জন হেলপার আছে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট পুজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু দেবদাস রায় বাবুল বলেন ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সুষ্ঠু ভাবে উৎসব মুখর পরিবেশে কালীগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি মন্ডবে পুজার কার্যক্রম চলবে।এবার অনেক বড় করে পূজা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলায় মোট ৯১টি প্রতিমা গড়া হচ্ছে।
এ বছর অনেক সাড়ম্বরে পূজা উদযাপন করা হবে। মূর্তি গড়ার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। কিছুদিন পর থেকেই রংয়ের কাজ শুরু হবে। দশভূজা দেবী দুর্গা এবার আসছেন দোলায় চড়ে। আর বিসর্জন যাবেন ঘোটকে। পূজাকে কেন্দ্র করে তাই সর্বত্রই চলছে সাজ সাজ রব।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমতিয়াজ কবির বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে, পুজায় আগত দর্শনার্থীদের ভিড় এড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ, পুলিশের টহল জোরদার করা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে অনুরোধ, সহ ইভটিজিং ও নারীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদানে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহির ইমাম বলেন, প্রতিমা তৈরির স্থানসমুহ এবং পূজা মন্ডপ গুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্হা গ্রহণ করা হয়েছে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে সুষ্ঠুভাবে যেন পূজা উদযাপিত হয় সে লক্ষে জনপ্রতিনিধি সহ সর্বসাধারণের সহযোগিতা কামনা করছি।
স্বাআলো/এস