ঢাকা স্টেডিয়ামে ফিরছে আন্তর্জাতিক ফুটবল

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল ফিরছে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। ২০২১ সালের জুলাইয়ে সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার পর এই ভেন্যুতে আর কোনো প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল ম্যাচ হয়নি।
বুধবার (৪ জুন) বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যকার একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৬৫৯ দিন পর ‘হোম অব ফুটবল’ খ্যাত এই স্টেডিয়ামে নতুন যাত্রা শুরু হচ্ছে।
জাতীয় স্টেডিয়ামে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর, নেপালের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি। এরপর সংস্কার কাজের জন্য এই মাঠে ফুটবল কার্যত বন্ধ হয়ে যায়, যদিও ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত ঘরোয়া ফুটবল সীমিত আকারে চলেছিল। গত কয়েক বছর ধরে বসুন্ধরা কিংসের কিংস অ্যারেনাকেই বাংলাদেশের অলিখিত হোম ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশে কাজ করলেও আজই তার এই ঐতিহাসিক ভেন্যুতে অভিষেক হচ্ছে। শুধু তিনিই নন, শেখ মোরসালিন, মিতুল মারমার মতো বেশ কয়েকজন তরুণ ফুটবলারেরও আজই হবে জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা।
যদিও স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক, নতুন আঙ্গিকে অনেক ফুটবলারের কাছেই এর পরিবেশ নতুন। এ প্রসঙ্গে গত মঙ্গলবার কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমার জন্য এটা এই ভেন্যুতে প্রথম ম্যাচ হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে কয়েকদিন অনুশীলন করেছি। মাঠ নতুন হলেও এই স্টেডিয়ামের সঙ্গে বাংলাদেশের সবাই পরিচিত।
দফায় দফায় বাজেট বেড়ে প্রায় ১৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে নতুন ফ্লাডলাইট, অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক, গ্যালারি, প্রেসবক্সসহ বিভিন্ন জায়গায় আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বিশেষ করে গ্যালারির শেডে লাইট বসানো হয়েছে, যা বাংলাদেশের কোনো স্টেডিয়ামে প্রথম। যদিও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্মাণ ও সংস্কার কাজের গুণগত মান নিয়ে সবসময়ই প্রশ্ন থাকে, এত বিপুল ব্যয়ে নতুন স্টেডিয়ামের এই নতুন পথচলা কেমন হয়, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম বাফুফে ও অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন যৌথভাবে ব্যবহার করে। অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন অবশ্য ২০২৪ সাল থেকে এই ভেন্যুতে তাদের জাতীয় প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে। বাফুফে ২০২১ সালের পর থেকে এখানে কোনো প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল আয়োজন করেনি। মাস কয়েক আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফাইনাল ম্যাচ আয়োজন করেছিল। জাতীয় নারী ফুটবল দলও মাঝে বেশ কিছুদিন এখানে অনুশীলন করেছে।
যদিও বর্তমান পরিচিতি ফুটবল ও অ্যাথলেটিক্সের ভেন্যু হিসেবে, এই মাঠের মূল সম্পর্ক ক্রিকেটের সঙ্গেই। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রথম হোম টেস্ট এবং বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট এখানেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের শততম ওয়ানডে ম্যাচে জয় এবং ২০১১ সালের ওয়ানডে ও ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও এই স্টেডিয়ামে হয়েছিল। এছাড়াও ১৯৮৫, ১৯৯৩ ও ২০১০ সালের এসএ গেমসের উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের ভেন্যু ছিল এটি। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের দুই কিংবদন্তি জিনেদিন জিদান ও বক্সার মোহাম্মদ আলীও পা রেখেছিলেন এই স্টেডিয়ামে।
বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালী অতীত এই স্টেডিয়ামের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্সের মতো ক্লাবের অনেক ঐতিহাসিক ম্যাচ এখানে হয়েছে। ২০০৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে বাংলাদেশের একমাত্র চ্যাম্পিয়নশিপ জয়—সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি আমিনুল-হাসান আল মামুনরা উঁচিয়ে ধরেছিলেন এই মাঠেই। বাংলাদেশের ফুটবলের সর্বশেষ বড় সাফল্য ২০১০ এসএ গেমসে স্বর্ণ জয়ও এখানেই এসেছিল।
আজ সন্ধ্যা ৭টায় নতুন আঙ্গিকের বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভুটান ম্যাচ দেখতে ফুটবলার, সাংবাদিক এবং দর্শকরা মুখিয়ে আছেন। দেশের এই ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামে নতুন আবহে ফুটবলের নতুন প্রাণ ফেরানোর দায়িত্ব এখন হামজা, জামালসহ দলের সবার কাঁধে।
স্বাআলো/এস