কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (আজাদ কাশ্মীর) ৯টি স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে ভারত। ভারতের এই সামরিক অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিন্দুর’। মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে চালানো এই হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে ইসরায়েল, অন্যদিকে এই হামলাকে ‘অপ্রস্তুত আগ্রাসন’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয় দেশকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
বুধবার (৭ মে) সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক বার্তায় ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রেউভেন আজার বলেন, সন্ত্রাসীদের জানা উচিত, তাদের জঘন্য অপরাধের জন্য কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই। ইসরায়েল ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে।
এই হামলার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল প্রায় দুই সপ্তাহ আগে কাশ্মীরের পেহেলগামে চালানো এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ভারত ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ তা সরাসরি অস্বীকার করে আসছে। এমনকি, এই হামলা নিয়ে ভারতীয় রাজনীতিতেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেসের দাবি, হামলার তিন দিন আগেই এ সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ছিল।
ভারতের হামলায় পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ২৬
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮ জানিয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে শুধুমাত্র সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করেই এই হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনায় কোনো হামলা হয়নি বলেই নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
ইসরায়েল ভারতের পাশে দাঁড়ালেও সম্পূর্ণ ভিন্ন সুরে কথা বলেছে তুরস্ক। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দারকে ফোন করে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এই হামলাকে ‘অপ্রস্তুত আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তুরস্ক আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং পাকিস্তানের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। দুই দেশ চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখবে বলেও ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
মধ্যরাতে পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত আট
ভারতের এই সামরিক অভিযান ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক এক বিবৃতিতে বলেন, নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে চালানো ভারতের এই সামরিক অভিযান নিয়ে মহাসচিব গভীর উদ্বিগ্ন। তিনি উভয় দেশকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, এই পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকরা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা এইমাত্র এর খবর পেয়েছি। ভারত-পাকিস্তান বহু দশক ধরে লড়াই করছে। আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হবে।
স্বাআলো/এস