বেনাপোল দিয়ে যাত্রী চলাচল অর্ধেক কমেছে

| July 30, 2024

সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলন, কারফিউ এবং ভিসা জটিলতার কারণে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যাত্রী চলাচল অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে প্রায় দুই কোটি টাকার রাজস্ব আয় কমে গেছে। অন্যান্য সময় প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজার যাত্রী যাতায়াত করতেন। এখন সেখানে প্রতিদিন যাতায়াত করছেন গড়ে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার যাত্রী। চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যান।

ভিসা প্রত্যাশী বাইজিদ বলেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাক্তার দেখাতে ভারতে যাওয়ার প্রয়োজন। চিকিৎসা করতে যাবো বলে গত ২৭ মে ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করেছিলাম। পাসপোর্ট জমা দিয়েছি ৭ জুলাই। কবে ভিসা পাবো আর কবেই বা ডাক্তার দেখাতে পারবো বুঝতে পারছি না।

ভারতগামী যাত্রী মিজানুর ও আজিম উদ্দিন বলেন, ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করার দেড়মাস পরে পাসপোর্ট জমা দিই ভিসা অফিসে। আর ভিসা পাই তার একমাস পরে। ভিসা পেতে এত সময় লাগলে আমাদের অন্য কোনো দেশে চিকিৎসার জন্য যেতে হবে।

চেকপোস্ট বাজারের ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, আমার জানা মতে, বর্তমানে ভারতীয় ভিসা পেতে অনেক সময় লাগার কারণে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী চলাচল অনেক কমে গেছে। আগে এ চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজার যাত্রী চলাচল করতেন। এখন সেখানে তিন থেকে চার হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন। পাসপোর্ট যাত্রী চলাচল কমে যাওয়ায় একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে, অন্যদিকে যারা চেকপোস্টে ছোট ছোট দোকান করে ব্যবসা করেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে এক যাত্রী বলেন, ভারতে যাওয়ার দিন পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে কাজের ধীরগতির কারণে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিলো। আজ দেশে ফিরে দেখছি, দেড়শো গজের মধ্যে তিন জায়গায় চেকিং। এছাড়া বিজিবি চেকিং দুইবার। এতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। যাত্রীদের বারবার হয়রানির কারণে এ পথ দিয়ে যাত্রীদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

সোনালী ব্যাংকের বেনাপোল শাখা ব্যবস্থাপক মহসিন আলী বলেন, বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে আগের তুলনায় যাত্রী যাতায়াত অনেক কমে গেছে। পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত কমে যাওয়ায় ভ্রমণ করের ট্যাক্স এখন অনেক কম আদায় হচ্ছে। ফলে সরকারের ট্রাভেল ট্যাক্সের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। গত এক সপ্তাহের হিসাব মতে, প্রায় দুই কোটি টাকার ভ্রমণকর কম আদায় হয়েছে।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আযহারুল ইসলাম সোমবার (২৯ জুলাই) জানান, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে চার হাজার নয়শত একচল্লিশ পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার হয়েছেন। এ নিয়ে গত ২২ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে ২৪ হাজার একশ তেত্রিশ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন। আগে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন সাত-আট হাজার পাসপোর্ট যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করতেন। বর্তমানে যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কমে যাওয়ায় প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন।

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম বলেন, বেনাপোল চেকপোস্টে আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণসহ অবকাঠামগত উন্নয়ন করার পর এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজার যাত্রী ভারতে যাতায়াত করে থাকেন। গত এক সপ্তাহ ধরে যাতায়াত একটু কম মনে হচ্ছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই যাত্রী চলাচল স্বভাবিক হবে।

স্বাআলো/এস