জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী: কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প দেশের গন্ডি পেরিয়ে রফতানি হচ্ছে বিদেশেও । বংশ পরস্পরায় এখনো আকড়ে রেখেছে পটুয়াখালীর মৃৎশিল্পিরা। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় ও বিভিন্ন উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন সমস্যায় দিন পার করছে শিল্পের সাথে জড়িত কারিগর ও কর্মচারীরা। সরকারি সকল সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বিসিকের কর্মকর্তা।
দেশের সর্ব দক্ষিণে সাগরকন্যা খ্যাত দ্বীপ জেলা পটুয়াখালী। জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে অন্যতম উপজেলা বাউফলে রয়েছে প্রাচীনকালের নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প। বাউফল উপজেলার পৌর শহরের ১নম্বর ওয়ার্ডের বলরাম পালের ছেলে কমল পাল। বংশ পরাম্পরায় স্মৃতি আর বাপদাদার স্বপ্ন পুরণে পেশার হাল ধনের তিনি।
বাউফলের মদনপুরা ইউনিয়নের পালপাড়া মাটির পণ্যের জন্য পরিচিত প্রায় একশ বছর ধরে। বৈশাখী মেলায় এখানকার তৈরী মাটির খেলনা বিক্রি হতো। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা আর নকশার আধুনিকতায় এর বাজার ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকাতেও। এখন আর শুধু খেলনা নয়, মাটির তৈরী ফুলদানী, ডিনার সেট, কাপ-পিরিচ, মগসহ বিভিন্ন শো-পিস তৈরী হয়। যার বাজার রয়েছে ঢাকার আড়ং সহ বিভিন্ন মার্কেটে। এর ফলে ফিরেছে প্রাণ। দেশের গন্ডি পেরিয়ে পাখা মেলে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বিদেশের মাটিতে। রতন পালের বাড়ির প্রতিটি ভাজে ভাজে যেনো চলে শিল্পকর্ম। কাজের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সকাল থেকেই কারিগরদের নৈপুণ্যতায় প্রথমে মাটি মুল্ডিং করার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় কার্যক্রম। পরে মাটির পরিমাপ, পণ্যের রূপ, নকশা, পলিশ এবং রৌদ্দে শুকানোর পর নানা রঙের আচরে রাঙিয়ে তোলা হয় পণ্যটি। আর সবশেষে প্যাকেজিং করেই কাজের ইতি টানেন।
এসএম সুলতান পদক পেলেন চিত্রশিল্পী নাদভী
সরকার যদি আমাদের দিকে সদয় দৃষ্টিতে চাইতেন তাহলে কারখানাকে আমরা বড় করে প্রজেক্টে নিতে পারতাম। যে প্লাস্টিক শরীরের দূর্গতি বাড়ায় ভালো কিছু হয়না। শরীরে বিভিন্ন রোগের কারণ হচ্ছে এ প্লাস্টিক। মাটি এমন একটা জিনিস। মাটির পণ্যে হচেছ সবচেয়ে বড় জিনিস। মাটির পণ্যে ভাত খান যা খান কোনো ক্ষতি নাই উপকার ছাড়া। আমাদের যে কয়টা কারখানা আছে চৈত্র মাসে আমরা মাল বেশি বানাইতেছি। ব্যবসার সাথে আমার কারখানা আছে দোকানেও সময় দেই কারখানায় সময় দেই।
আমাদের এখানে ৫০ থেকে ৬০ ফ্যামিলি আছে। আমাদের তৈরিপণ্যগুলো বিদেশে রফতানি হয়। কিন্তু আমরা অফিসিয়াল ভাবে দেই। আমরা সরাসরি বিদেশে দিতে পারিনা বলে সেরকম লাভবান হতে পারিনা। আমাদের মালগুলো সরকার নেয় তাহলে লাভবান হতে পারবো। আমরা আগে পালেরা তৈরি করতাম এখন বিভিন্ন জাতি লিপ্ত হইয়া গেছে তারাও এই কাজ করে।
পটুয়াখালীতে নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সহায়তা বিতরণ
পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে নারী শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশী। শ্রমিকরা এখান থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বহন করেন।আর তাদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরী নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন মাটির সামগ্রী দেশেতো বটেই ঠাঁই নিয়েছে ইটালি, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, ইউকে, আমেরিকা, স্পেন ও জাপানসহ ২৪টি দেশে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) পটুয়াখালী জেলা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আলমগীর সিকদার জানান, কালের আবর্তনে বাজারে পুরানো জিনিসের কদর না থাকায়, এখন তৈরী করেন আধুনিক সবসামগ্রী। আর বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ব্যবসার পরিধি বড় করতে পারছেন না তারা। তবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বিসিকের এই কর্মকর্তা।
স্বাআলো/এস