সম্পাদকীয়: পাঠাগারের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে পাঠাগারের গুরত্ব তুলে ধরা হয়েছে। গুণগত শিক্ষা ছাড়া শিক্ষা মূল্যহীন। এজন্য শুধু পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। পাঠ্য বিষয়ের সাথে বহির্জগতের জ্ঞানভাণ্ডার থেকে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। কিন্তু বহির্জগতের জ্ঞান আহরণের চিত্র বড়ই হতাশাব্যঞ্জক।
এই জ্ঞান আহরণের সর্বোত্তম জায়গা হচ্ছে পাঠাগার বা গণগ্রন্থাগার। কিন্তু হাল আমলের কোনো শিক্ষার্থী পাঠাগারমুখী নয়। দেশে যে গণগ্রন্থাগারগুলো আছে সেখানে লেখাপড়ার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবটাই আছে । আছে অবকাঠামো, পর্যাপ্ত বই, পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু পাঠক নেই, ফাঁকা পড়ে থাকে।
দেশে গ্রন্থাগার ও ডাকঘরের অবস্থা একই রকম হয়েছে। আগেকার দিনে ডাকঘর যে কতো জরুরি ছিলো তা বলে বোঝানো যাবে না। কিন্তু এখন সেই ডাকঘর যেনো অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এখন আর কেউ চিঠি লেখে না। এই চিঠির প্রয়োজন তাৎক্ষণিকভাবে মিটাচ্ছে মোবাইল ও ইন্টারনেট। গ্রন্থাগারের অবস্থাও একই। এখন কেউ আর বই পড়ে না। এখন বই পড়ার ধরন পাল্টেছে। আগে পাঠকরা যে সব বই লাইব্রেরিতে পড়তো এখন পড়ে ই-বুকে। এখন ফেসবুক নিয়ে মানুষ ব্যস্ত থাকে। স্কুল কলেজে পড়ার চাপও অনেক। এ কারণে লাইব্রেরিতে আসার সুযোগ কমে গেছে।
নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে পিএসসি
আসলে দিন বদলের হাওয়ায় অনেক কিছু ভেসে যাচ্ছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির বিপক্ষে আমরা নই। কিন্তু প্রযুক্তির অপপ্রয়োগ সমর্থনযোগ্য নয়। ই-বুকে পাঠক বই পড়ছে কিনা জানিনে। তবে তার জীবনের মূল্যবান সময় যে ফেসবুকের পেছনে কেটে যাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞান বিকাশের অন্তরায় নয়। কিন্তু তা বইয়ের বিকল্প হতে পারে না। জ্ঞান অর্জনের প্রতি মনীষীরা গুরুত্বারোপ করেছেন। অতীতকে জানা প্রতিটি সচেতন মানুষের একান্ত দরকার। এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষা। যার মাধ্যম হলো বই। এই বইয়ের সংরক্ষণাগার হলো গ্রন্থাগার। এ জন্য গ্রন্থগারকে জনগণের বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়।
ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত কল্যাণের জন্য সবার আগে প্রয়োজন জ্ঞান। বই পড়ার মাধ্যমে এই জ্ঞানের পূর্ণতা আসে। সচেতনতা সৃষ্টি হয়। একটি জাতি ওই সময় সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত হয়, যখন তার প্রতিটি মানুষ জ্ঞানী ও সচেতন হয়ে গড়ে ওঠে। আর এ জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। রাষ্ট্রপতির আহবান অনুযায়ী গুণগত মানসম্মত শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের পাঠাগামুখী হতে হবে।
স্বাআলো/এস