ঢাকা অফিস: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ব্যবহার করে দুর্বৃত্তদের সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে আকাশ থেকে হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করা হয়নি। বরং বিভিন্ন ভবনে আটকে পড়া সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়েছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস এ কথা জানান।
সম্প্রতি সংঘর্ষের ঘটনা প্রতিরোধে আকাশ থেকে হেলিকপ্টার দিয়ে গ্যাস গান ও সাউন্ড গ্রেনেড ফেলা হয়। তবে এ ঘটনার ভিডিও ব্যবহার করে হেলিকপ্টার দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করার অভিযোগে তথ্য ছড়ানো হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা গত ১৮ জুলাই সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালীন দুষ্কৃতকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ ও নাশকতার মাধ্যমে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।রাজধানীর রামপুরায় বিটিভি ভবন, মিরপুরে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হানিফ ফ্লাইওভার, সেতু ভবন, ডাটা সেন্টার, বিআরটিএ ভবন এবং পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
হেলিকপ্টার থেকে কোনো প্রকার গুলি করা হয়নি বা কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি উল্লেখ করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন: ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীদের আক্রমণের শিকার হয়ে ডিএমপির সদস্যরা কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাদে অবস্থান নেন। এরপর দুপুর সোয়া ২টায় অবরুদ্ধ ৬১ জন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে র্যাবের হেলিকপ্টার। ২০ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় দুর্বৃত্তরা হাসপাতাল ভবনের নিচে অগ্নিসংযোগ করলে সেই ভবনের বাসিন্দা ও হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা ছাদে অবরুদ্ধ হন। ওই সময় ভবনের নিচে তিনজন শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ভবনের ছাদে অবরুদ্ধরা র্যাবের সহায়তা চাইলে হাসপাতালের কর্মচারীসহ ৩৬ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে র্যাবের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়।
মুনীম ফেরদৌস বলেন, এ সময় দুর্বৃত্তরা কোমলমতি শিশু-কিশোরদের আত্মরক্ষার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাস্তা অবরোধ করে এবং ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে যেতে বাধা সৃষ্টি করে। শিশু-কিশোররা সামনে থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে।
তিনি বলেন, নিরুপায় হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলাচলের পথ সুগম করার জন্য এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে জনগণের জানমালের ক্ষতিসাধন ও ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, আকাশপথে র্যাবের হেলিকপ্টার টহল ও উদ্ধারসহ সকল কার্যক্রমের ভিডিওচিত্র র্যাব ফোর্সেস কর্তৃক ধারণ করা হয়েছে যা ইতোমধ্যে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, র্যাবের ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত, সরকারি স্থাপনা রক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও মানবাধিকার সুনিশ্চিত করতে র্যাবের সকল সদস্য বদ্ধপরিকর। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চায়নে র্যাবের টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে বলে জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
স্বাআলো/এস/বি