ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান ও নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ থামছেই না। হামাসকে উৎখাত এবং জিম্মি উদ্ধারের নামে চালানো এই লাগাতার হামলায় উপত্যকাটিতে প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। গাজার বাসিন্দাদের জন্য কোনো স্থানই আর নিরাপদ বলে বিবেচিত হচ্ছে না। একদিকে আকাশ ও স্থলপথে অভিযান, অন্যদিকে তীব্র খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ—সব মিলিয়ে গাজা তার বাসিন্দাদের জন্য যেন এক জীবন্ত নরকে পরিণত হয়েছে।
সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকাটির বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলায় আরও অন্তত ৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু উত্তর গাজার আল-বাকা নামে একটি সমুদ্র তীরবর্তী ক্যাফেতে চালানো হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৯ জন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার মঙ্গলবার (১ জুলাই) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আল-বাকা ক্যাফেতে নারী ও শিশুসহ অনেকেই একটি জন্মদিন উদযাপন করতে সমবেত হয়েছিলেন। কোনো ধরনের পূর্বসতর্কতা ছাড়াই সেখানে যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেলা হয়। নিহতদের মধ্যে একজন সাংবাদিকও রয়েছেন।
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহত ক্ষুধার্ত ত্রাণপ্রার্থীসহ আরো ৭২
শুধু তাই নয়, গাজা শহরের ইয়াফা স্কুলে আশ্রয় নেওয়া কয়েকশ বাস্তুচ্যুত মানুষের ওপরও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাদা আবু জারাদে নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হামলার মাত্র পাঁচ মিনিট আগে তারা সরে যাওয়ার নোটিশ পেয়েছিলেন। এছাড়া মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকার আল-আকসা শহীদ হাসপাতাল চত্বরেও হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে কয়েক হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। এই হাসপাতালে এর আগেও অন্তত ১০ বার হামলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইসরায়েল ত্রাণের আশায় অপেক্ষারত মানুষকেও হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসে বিতর্কিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’-এর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাবারের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের ওপর চালানো হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় যে সামরিক অভিযান শুরু করেছিল, তা এখনও চলছে। আন্তর্জাতিক মহলের বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও তারা এই হামলা অব্যাহত রেখেছে। গত প্রায় ২০ মাসে ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
স্বাআলো/এস