যশোরে বেতন আটকে গেছে হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর

রুহুল আমিন: যশোরে ইএফতি সিস্টেমে বেতন দেয়ায় বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা হতাশায় ভুগছেন। মাসের প্রথমদিনে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাত্র কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী বেতন পেয়েছেন। জানুয়ারি মাসের ১৪ দিন পার হয়ে গেলেও অধিকংশ শিক্ষক-কর্মচারী এখনো ডিসেম্বর মাসের বেতন পাননি।

জেলায় ছয় শতাধিকের বেশি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ রয়েছে। সেখানে কর্মরত কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির মাধ্যমে শুধুমাত্র মূল বেতন পান। বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, টিফিন খরচ ও যাতায়াত খরচ পান না। মূল বেতন নিয়েই শিক্ষক-কর্মচারিদের সন্তোষ্ট থাকতে হয়। নতুন সিস্টেমে বেতন না পেয়ে এসব শিক্ষক-কর্মচারিরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে হতাশায় আছেন কেন বেতন হচ্ছে না?

জানা গেছে, যশোর জেলায় ৫৩৪ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৮৯টি কলেজ রয়েছে। যারা সবাই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নামে পরিচিত। এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সেখানকার শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন পান। কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারি এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। শিক্ষকতা পেশায় জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। এসব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির পর থেকে ম্যানুয়ালি পদ্ধতিতে শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন দিয়ে আসছে। এ পদ্ধতিতে বেতন বিলে স্বাক্ষর করতেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠান। গত ডিসেম্বর ইএফটি সিস্টেম চালু হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের বেতন ইএফটি পদ্ধতিতে জানুয়ারি মাসের প্রথমদিন কিছু শিক্ষক-কর্মচারিদের হয়েছে। ১৪ দিন পার হয়ে গেলেও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অর্ধেকের বেশি শিক্ষক-কর্মচারি এখনো বেতন পানি। বেতন না পেয়ে প্রায় সবাই মানবেতর দিন পার করছেন।

ভাতুড়িয়া হাইস্কুল ও কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহকারি অধ্যাপক নুর ইসলাম জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষক যেন একটি অভিশপ্ত শব্দ। ম্যানুয়ালি পদ্ধতিতে বেতন পেতাম মাসের ৮ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে। দ্রুত বেতন পাওয়ার জন্য ইএফটি সিস্টেম চালু হয়েছে। কিন্তু ১৪ দিন পার হলেও এখন বেতন পাইনি। সরকারের ঊধ্বত্মন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি মাসের প্রথমদিনে এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষক-কর্মচারি হিসাব নম্বরে বেতন দিতে হবে’।
শার্শার নিজামপুর হাইস্কুলের ইসলাম শিক্ষার সহকারি শিক্ষক আব্দুল মালেক জানান, ‘বেতন দিয়ে তার সংসার চলে। এক ছেলে, এক মেয়ে, মা ও স্বামী-স্ত্রী মিলে পাঁচজনের সংসার তার। ছেলে অনার্সে অধ্যায়নরত। মাসের প্রথম সপ্তাহে ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিতে হয়। ১৪ দিন পার হয়ে গেল তিনি এখনো বেতন পাননি। বড়ই বিপদে আছেন তিনি। যথাসময়ে বেতন দেয়ার দাবি করেন তিনি।

চৌগাছা এবিসিডি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল ইসলাম জানান, ইএফটি সিস্টেমে তার কলেজে মাত্র আটজন বেতন পেয়েছেন। ৩৭ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারির মধ্যে বাকিরা এখনো বেতন পাননি। সবাই হতাশ। দ্রæতই বেতন দেয়ার দাবি করেন তিনি।

জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন জানান, ‘ইএফটি সিস্টেমে প্রথম শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেয়া হচ্ছে। সেইজন্য কিছুটা জটিলতা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে চলতি সপ্তাহের সব শিক্ষক-কর্মচারির হিসাব নম্বরে বেতন চলে যাবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুল খালেক জানান, ‘অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে এমপিওশীটে নামের বানান ও জন্ম তারিখের মিল নেই। সেইজন্য বেশ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এই জটিলতাগুলো নিরাসনের কাজ চলছে। আশা করা যায় দুই এক দিনের মধ্যে সবার বেতন ব্যক্তিগত হিসাব নম্বরে চলে যাবে। দুঃচিন্তার কোন কারণ নেই। পরবর্তীতে কাউ এ ধরণের জটিলতায় আর পড়তে হবে না।

স্বাআলো/এস

Share post:

Subscribe

Popular

আপনার জন্য
Related

দুই ধাপে টানা ৬ দিন ছুটি পাচ্ছেন চাকরিজীবীরা

ঢাকা অফিস: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চলতি মে মাসে দুই দফায়...

সাতক্ষীরা উপকূলে নদী রক্ষা বাঁধে ফাটল, আতঙ্কে গ্রামবাসী

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের...

ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলো ইরান, আহত চার শতাধিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী বন্দর আব্বাসে একটি ভয়াবহ...

যশোরে দুই নারী মাদক ব্যবসায়ী আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের এক যৌথ অভিযানে...