জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীতে জেলার গলাচিপা উপজেলার চরবাংলা মৌজার খাস জমিতে অবস্থানরত প্রকৃত ভূমিহীন পরিবারের মাঝে বন্দোবস্ত দেয়ার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ কৃষক মজুর সংহতি ও চরবাংলা বিত্তহীন কৃষক সমবায় সমিতি।
মঙ্গলবার ( ৯ জুলাই) পটুয়াখালী প্রেসক্লাবে পটুয়াখালী জেলা বাংলাদেশ কৃষক মজুর সংহতি ও চরবাংলা বিত্তহীন কৃষক সমবায় সমিতির আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চরবাংলা মৌজার খাস জমি চরে অবস্থানরত প্রকৃত ভূমিহীন পরিবারের মাঝে বন্দোবস্ত দেয়ার দাবী জানিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বাংলাদেশ কৃষক মজুর সংহতির সভাপতি এস এম আমজাদ হোসেন।
পটুয়াখালীতে এইচএসসি পরীক্ষায় ১৭২ জন অনুপস্থিত
তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেছেন – গলাচিপা উপজেলার চরবাংলা মৌজা বুড়া গৌড়াঙ্গ নদীর মাঝে জেগে উঠা চরবাংলা। এ জেগে উঠা চরে দীর্ঘ ৩০/৩৫ বছর যাবৎ ভূমিহীন পরিবারের মানুষজন কঠোর পরিশ্রম করে চাষাবাদ উপযোগী গড়ে তুলে বাড়ী- ঘর তৈরী, গাছা লাগানো পুকুর কেটে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছে। চরে বসবাসরত ৩২০টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে ঐ সরকারী খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে দাবী করে আসছে।
ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা ভূমি অফিসে দেন-দরবার করে বিষয়টি মীমাংসা না হওয়ায় ভূমিহীন পরিবারের পক্ষে চরবাংলা মৌজার দিয়ারা জরিপের মাধ্যমে বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য হাইকোর্টে একটি মামলা করে। যা চলমান আছে। এ অবস্থায় কতিপয় প্রভাবশালী বিত্তশালী ভূমি দস্যু ধনী ব্যক্তি ৬২-জি/৭৭-৭৮ একটি চর্চা ম্যাপ তৈরী করে নামে নেনামে একাধিক দাগে ভূয়া ভাবে শত শত একর সরকারী খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়েছে। কিন্তু এ ৬২-জি/৭৭-৭৮ চর্চা ম্যাপ দেখিয়ে ভূমি বন্দোবস্ত নিয়েছে তার কোন হদিস ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা অফিসে পাওয়া যায়নি। যে চর্চা ম্যাপের অস্তিত্ব কোন ভূমি অফিসে খুজে পাওয়া যায়নি সেই ভূয়া ম্যাপের ভিত্তিতে কিভাবে দিয়ারা সেটেলমেন্ট অফিস জরিপ চালিয়ে জমি বন্দোবস্ত দিচ্ছে।
পটুয়াখালীতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণ
চরবাংলা ভূমিহীনদের এক আবেদনে গত ১০.১০.২০১৮ ইং তারিখ হাইকোর্ট এক অবজারভেশনে খাস জমি নীতিমালা ১৯৯৭ এর ২৭ অনুচ্ছেদ মোতাবেক অবিলম্বে চরবাংলা মৌজার দিয়ারা জরিপ সম্পন্ন করার নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে চরবাংলা মৌজার দিয়ারা জরিপ চলমান আছে।
সংবাদ সম্মেলনে এসএম আমজাদ আরো বলেন, ভূয়া চর্চা ম্যাপে বিত্তশালী ভূমি দস্যুদের যখন খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার আয়োজন চলছে, তখন চরবাংলায় বসবাসকারী ভূমিহীনদের আবেদনে হাইকোর্ট গত ২৪.০১.২০১৯ ইং তারিখ চরবাংলার দিয়ারা জরিপ কেন স্থগিত করা হবে না তা জানতে চেয়ে দিয়ারা জরিপ বরিশালসহ সংশ্লিস্ট সকল ভূমি অফিসে নোটিশ প্রেরণ করা হয়। অন্যদিকে ভূমিহীনদের পক্ষ অনতিবিলম্বে ভূয়া ও সরকারীভাবে অনুমোদন বিহীন চর্চা ম্যাপ ( ৬২- জি/৭৭-৭৮ যার অস্তিত্ব আজও কোনো ভূমি অফিসে পাওয়া যায়নি তা বাতিল এবং নতুন ম্যাপ তৈরী করে চরবাংলায় বসবাসরত প্রকৃত ভূমিহীন পরিবারের মাঝে সরকারী খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার দাবীতে ২০.০৬.২০২৩ইং তারিখ ভূমিহীনরা মিছিলসহকারে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
পটুয়াখালীতে ৫০ জনকে সমবায়ের ৮০ লাখ টাকা ঋণের চেক বিতরণ
ভূমি প্রশাসন ম্যানুয়াল অনুযায়ী দেশের খাস জমির প্রকৃত মালিক ভূমিহীনরা। সেখানে ভূমিহীনদের বঞ্চিত করে ভূমি অফিসের একশ্রেণীর অসাধু ও ঘুষখোর কর্মকর্তা প্রচুর অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালী ধনী বিত্তশালী ভূমিদস্যুদেরকে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার অপতৎপরতা বন্ধ করে প্রকৃত ভূমিহীনদের বিশেষ করে চরবাংলা বসবাসরত ৩২০ পরিবারের মাঝে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার দাবী করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। তাদের এ দাবী বাস্তবায়নে চলতি মাসের শেষদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচী পালনের হুশিয়ারী দেন সংবাদ সম্মেলনে আসা ভূমিহীন ও ভূমিহীন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক মজুর সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি দেওয়ান আব্দুর রশিদ নিলু, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম, প্রচার সম্পাদক জাফর শাফি, জেলা কমিটির সভাপতি আমজাদ হোসেন, চরবাংলা বিত্তহীন কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি সিরাজ খান, সহ- সভাপতি হারুন হাওলাদার, ক্যাশিয়ার মজিবর হাওলাদার, সদস্য সাহাবদ্দিন, সদস্য আঃ রব খান, সাদস্য ফারুক মীরসহ অন্যান্য ভূমিহীন পরিবারের সদস্যবৃন্দ।
স্বাআলো/এস