আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) কাবুলে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠকে রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনোভ এই স্বীকৃতির বিষয়টি জানানোর মাধ্যমে মস্কো এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর মধ্য দিয়ে তালেবান প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া বিশ্বের প্রথম দেশ হলো রাশিয়া।
আফগানিস্তানে নিযুক্ত তালেবান সরকারের নতুন রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করে এই স্বীকৃতি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তকে ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এটি ইতিবাচক সম্পর্ক, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং গঠনমূলক সহযোগিতার এক নতুন অধ্যায়। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত অন্য দেশগুলোর জন্যও একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তানের সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার এই পদক্ষেপ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিশেষ করে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অংশীদারত্বকে আরও গতিশীল করে তুলবে।’ বিবৃতিতে আফগানিস্তানের জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি এবং অবকাঠামো খাতে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব গড়ার বিশাল সুযোগ রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাবুলকে সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে মস্কো।
২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই তারা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত কোনো দেশ তাদের সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। রাশিয়া প্রথম দেশ হিসেবে সেই সিদ্ধান্ত নিল।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের এপ্রিলে রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট তালেবানকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে যে তালিকাভুক্ত করেছিল, তা তুলে নেয়। এর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত বছর তালেবানকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী মিত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। ২০১৮ সাল থেকেই তালেবানের প্রতিনিধিরা নিয়মিত মস্কো সফর করে আসছেন, যা দুপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের যোগাযোগের ইঙ্গিত বহন করে।
রাশিয়া ২০২২ সালে আফগানিস্তানের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক চুক্তিতেও স্বাক্ষর করে, যেখানে আফগানিস্তানকে তেল, গ্যাস এবং গম সরবরাহের বিষয়ে সম্মত হয় মস্কো। এমনকি তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পরও যে কয়েকটি দেশ কাবুলে তাদের দূতাবাস বন্ধ করেনি, রাশিয়া তাদের অন্যতম।
কাবুলে রুশ দূতাবাস টেলিগ্রামে এক বার্তায় জানিয়েছে, আফগানিস্তানের সঙ্গে সংলাপ সম্প্রসারণ আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।
অন্যদিকে, পশ্চিমা সরকার এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে। তাদের অভিযোগ, তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নারী শিক্ষা ও স্বাধীনতার ওপর ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে এবং কঠোর শরিয়া আইন প্রয়োগ করছে। এর পাশাপাশি, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ২০২১ সালে আফগানিস্তানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার জব্দ করে, যা এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি।
চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান ও উজবেকিস্তানের মতো কিছু দেশ কাবুলে দূতাবাস চালু রাখলেও, তারা এখন পর্যন্ত তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। ভারতও কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে গেলেও সরকারটিকে স্বীকৃতি দেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে, তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করল এবং বিশ্বজুড়ে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
স্বাআলো/এস