গর্ভাবস্থার যে আমলে সন্তান সৎ হয়

একজন সৎ সন্তান কে না চায়। পৃথিবীর সব মানুষ চায় তার সন্তান নেককার হোক। সৎ ও চরিত্রবান হোক। কিন্তু বাবা-মায়ের কারণেই সন্তান তাদের মনের মতো হয়ে ওঠে না। সন্তান যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন ভ্রুণ অবস্থা থেকেই মায়ের যাবতীয় চাল-চলন ও গতিবিধির বিস্তর প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ে। এটা সাইন্টিফিকভাবে পরীক্ষিত বিষয়।

একজন মা গর্ভধারণ করার পর থেকে তার কষ্ট শুরু হয়। ভ্রুণ অবস্থা থেকেই এ অবর্নণীয় কষ্ট। কোরআনে আল্লাহ বলেন, তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। (সুরা: লুকমান ১৪)

ইসলামে গর্ভবতী মায়ের আমল

আর একজন মায়ের অসহনীয় এ কষ্টের ফসল ‘সন্তান’ যদি তারই অসতর্ক চাল-চলনের কারণে নেক, সৎকর্মশীল ও সুচরিত্রের অধিকারী না হয় তাহলে একদিন এ মাই নিজের গর্ভ-ব্যর্থতার কথা বলেন। কষ্টে বুক পেতে সন্তানকে বলেন, তোকে গর্ভে ধারণ করে ভুল করেছি। এজাতীয় কথা কোনো মাকেই যেনো বলতে না হয়, আল্লাহ আমাদের সন্তানদের হেফাজত করুন। গর্ভাবস্থা থেকে যে আমল আপনার সন্তানকে নেককার বানাতে সহায়তা করবে।

গুনাহ থেকে বাঁচা: গুনাহ সব খারাপ কাজের মূল। গর্ভাবস্থায় গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। ফরজ ইবাদত তো করতেই হবে। নফল ইবাদত করতে না পারেন কিন্তু গুনাহ করা যাবে না। অতিরিক্ত ইবাদতের চাইতে গুনাহ ছেড়ে দেয়ার চিন্তা বেশি করতে হবে। আপনার ভেতরে বেড়ে ওঠা সন্তানের জন্যই ইবাদত করতে হবে। গুনাহ ছাড়তে হবে।

যেমন, মুভি-সিরিয়াল দেখা থেকে বিরত থাকা। কণ্ঠস্বরকে সংযত করা, প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া। গায়রে মাহরাম আত্মীয়ের সাথে দেখা সাক্ষাত থেকে বিরত থাকা। পর্দা লঙ্ঘন না করা। এভাবে চলতে পারলে পবিত্র কোরআনের সুসংবাদ গ্রহণ করুন কষ্টের সাথেই আছে সুখ। (সুরা: আলাম নাশরাহ ৬) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পার। তবে আমি তোমাদের ছোট গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবো ও সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাবো। (সুরা: নিসা ৩১)

ধৈর্য্য ধরা: গর্ভাবস্থাটা খুব সহজ না। অনেক কঠিন সময় পার করতে হয় মায়েদের। অসুস্থতা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা প্রভৃতি কারণে ধৈর্য্যহারা হবেন না। এভাবে ভাবুন, এই সময়টার প্রতিটি মুহূর্ত আপনার জন্য জিহাদতূল্য ইবাদত। এতে ধৈর্য্য ধারণ করা আপনার জন্য সহজ হবে। আপনার কষ্ট শক্তিতে পরিণত হবে। নবীজী খুব সুন্দর করে বলেছেন ‘সবর হলো জ্যোতি।’ (মুসলিম ২২৩)

কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন: আল্লাহ তাআলা আপনাকে সন্তান দিয়েছেন, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করুন। অনেক মানুষ আছে বহুবছর ধরে অপেক্ষা করছেন, কত তদবির কত ওষুধ খাচ্ছেন, কিন্তু সন্তান হচ্ছে না। মা হওয়ার মাঝেই নারীজন্মের আনন্দ। যখনি মা হওয়ার আনন্দে পুলকিত হবেন তখনি আল্লাহর শোকর আদায় করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সুরা: বাকারা ১৫২)

রাত না জাগা: গর্ভাবস্থায় শুরুর রাতে ঘুমিয়ে যান। সম্ভব হলে শেষ রাতে আল্লাহ তাআলা যখন শেষ আসমানে নেমে আসেন তখন তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে চান। নেক সন্তান ও সুস্থ সন্তান প্রার্থনা করুন। তাছাড়া রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে স্বাস্থ্যহানী ঘটে। শারীরিক সুস্থতার জন্য অবশ্যই ছয় ঘণ্টা আপনাকে ঘুমাতে হবে। ফজর যথাসময় পড়তে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। (সুরা: নাবা ৯)

সবসময় অজু অবস্থায় থাকা: দৈহিক সুস্থতা ও আত্মিক প্রশান্তির ক্ষেত্রে অজুর ভূমিকা অপরিসীম। বিশেষত, ঘুমানোর আগে অজু করে ঘুমানো। গর্ভাবস্থায় অনেক সময় ঘুম কম হয়। ঘুমের আগে অজু করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাছাড়া সাওয়াব তো আছেই। রাসুল (সা.) বলেন, যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাজের অজুর মতো অজু করবে। (মুসলিম: ৪৮৮৪)

যথাসময়ে নামাজ আদায়: গর্ভাবস্থায় অস্থিরতা বেশি কাজ করে। এ সময় আপনি যথাসময়ে নামাজ আদায় করুন। নিয়মিত আল্লাহর সঙ্গে কথা বলুন। আপনার সন্তানের জন্য দোয়া করুন। হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করবেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) এজন্যই নামাজের সময় হলে হজরত বেলাল (রা.) কে বলতেন, নামাজের ব্যবস্থা কর এবং তার মাধ্যমে আমাকে তৃপ্ত কর। (আবু দাউদ: ৪৩৩৩)

বেশি বেশি জিকির করুন: মানসিক, আত্মিক প্রশান্তি কে না চায়। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় খুব বেশি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় নারীদের। এ অস্থিরতা দূরীকরণে কোরআনি চিকিৎসা জিকির। আল্লাহর জিকির আপনাকে ও আপনার গর্ভের সন্তানকে শান্ত রাখতে সহায়ক হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, কোরআনে বলেন, যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের মন প্রশান্ত হয়, জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই মন প্রশান্ত হয়। (সুরা: রাদ ২৮)

কোরআন তিলাওয়াত: কোরআন তিলাওয়াত হৃদয়ে প্রাশান্তি আনে। স্বস্তি আনে। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, প্রায় ১৯ অথবা ২০তম সপ্তাহ থেকেই গর্ভের বাচ্চা শোনার সক্ষমতা অর্জন করে। মা প্রতিদিন জোড়ে জোড়ে অল্প কিছুক্ষণ কোরআন তিলাওয়াত করবে। এতে আপনার অনাগত সন্তান কোরআনের সাথে সম্পর্ক তৈরি হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন,

কোরআনের বিষয়ে তোমাদের উপর অবশ্য পালনীয় এই, কোরআন শিক্ষা করা আর তোমাদের সন্তানদের কোরআন শিক্ষা দেয়া। কেননা এ বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে। তার প্রতিদানও দেয়া হবে। (শরহে বোখারি, ইবন বাত্তাল: ৪৬)

প্রতিদিন ঘুমের পূর্বে অবশ্যই চার কুল তথা সুরা কাফিরূন, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দিয়ে সারা শরীরে হাত বুলিয় নিলে খারাপ আসর থেকে মুক্ত থাকা যায়।

বেশি বেশি দোয়া করা: গর্ভকালীন সময়ে মাঝে মাঝে শারীরিক মানসিক অস্থিরতা অনুভব হয়। নিজেকে অসহায় মনে হয়। এমনও মনে হয়, না-জানি এবার আমি মরে যাব! তাই গর্ভকালীন সময়ে বেশি বেশি দোয়া করা। কেননা এসময়ের দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। আল্লাহ বলেন, বলো তো কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন। (সুরা: নামল ৬২)

নেক সন্তান লাভের দোয়া: আপনি একজন মা। আপনার সন্তানের জন্য আপনার দোয়া সবচেয়ে বেশি কবুল হবে। নেক, সুস্থ ও সুন্দর সন্তান কামনা করে বার বার দোয়া করুন। এক্ষেত্রে কোরআনের বর্ণিত দোয়াগুলো বেশি বেশি পাঠ করুন।

رَبِّ هَبْ لِىْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً‌ۚ اِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعَآءِ উচ্চারণ: রব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা যুররিয়্যাতান ত্বয়্যিবাতান, ইন্নাকা সামিউদ্দোআ। অর্থ: হে আমার পালনকর্তা! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (সুরা: আল ইমরান ৩৮)

পুত্র-সন্তান লাভের জন্য পড়তে পারেন رَبِّ هَبْ لِىْ مِنَ الصّٰلِحِيْنَ উচ্চারণ: রব্বি হাবলি মিনাস্ সলিহিন। অর্থ হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দান করুন। (সুরা: আস-সাফফাত ১০০)

কোনো গর্ভবর্তী নারী যদি আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম (اَلْمُتَعَالِىْ) ‘আল-মুতাআ’লি’ এবং (اَلْمُبْدِئُ) ‘আল-মুবদিয়ু’ পড়তে থাকে তবে ঐ মহিলা তার গর্ভকালীন কষ্টক্লেশ থেকে মুক্তি পায়।

এ পরামর্শ মেনে চললে গর্ভবতী মা যেমন মহান আল্লাহর কাছে প্রিয় হয়ে ওঠবেন, অনুুরূপভাবে তার ভেতরে বেড়ে ওঠা সন্তানও ‘নেক’ হবে ইনশাআল্লাহ।

স্বাআলো/এস

Share post:

Subscribe

Popular

আপনার জন্য
Related

মাগুরায় আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, মুখে মাস্ক-হেলমেট

লিটন ঘোষ জয়, মাগুরা: মাগুরায় হেলমেট ও মাস্ক পরে...

মাদক সেবন করে গৃহকর্মীকে নির্যাতন, পরীমনির বিরুদ্ধে মামলা

বিনোদন ডেস্ক: মাদক সেবন করে গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে চিত্রনায়িকা...

মালয়েশিয়ায় ক্রেন দুর্ঘটনায় শার্শার যুবক নিহত

মালয়েশিয়ায় ক্রেন দুর্ঘটনায় আসাদুল (৪০) নামে এক বাংলাদেশি নির্মাণ...

নদী ভাঙন রোধ ও রেগুলেটর চালুর দাবিতে কোম্পানীগঞ্জে হাজারো মানুষের মানববন্ধন

জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী: জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নে বামনী...