অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য ২০২৬ এশিয়ান কাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। এক ম্যাচ হাতে রেখেই গ্রুপ পর্বের কঠিন বাধা পেরিয়ে এই ঐতিহাসিক যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা, যেখানে তারা পরাজিত করেছে পাঁচবারের ফাইনালিস্ট ও শক্তিশালী মিয়ানমারকে, যাদের কাছে এর আগে বাছাইপর্বে পাঁচ গোল হজম করে বিদায় নিতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এই অর্জন বিশ্ব ফুটবলের বড় মঞ্চগুলোর দুয়ার খুলে দিয়েছে বাংলাদেশের সামনে।
এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের ফলে এখন বাংলাদেশের সামনে সুযোগ তৈরি হয়েছে বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক ফুটবলে খেলার। ২০২৬ সালের মার্চে অস্ট্রেলিয়ার এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলবে ১২টি দেশ। এই ১২ দেশের মধ্যে শীর্ষ আটে থাকা দলগুলো পাবে ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক গেমসের টিকিট। আর শীর্ষ ৬ দল পাবে ২০২৭ নারী বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলার সুযোগ। যদি শীর্ষ ৬ দল সরাসরি চলে যায়, তবে ৭ ও ৮ নম্বর দলের জন্য প্লে অফ খেলার সুযোগ থাকবে, যা বিশ্বকাপের শেষ দুয়ার। সহজ কথায়, ১২ দেশের মধ্যে অষ্টম স্থানে গেলেই বাংলাদেশের সামনে অনেক সম্ভাবনা খুলে যাবে।
এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে বাংলাদেশ কীভাবে সামনে এগিয়ে যাবে, তা নিয়ে এখনই ভাবনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা বেশ সিরিয়াস এবং বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে সেভাবেই প্রস্তুত করা হবে।
কিরণ বলেন, “আমাদের যে কোচ পিটার বাটলার.. উনি অনেক ভালো কোচ। খেলেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে তারপর, হয়েছেন কোচ। একজন কোচ যখন ঐ পর্যায়ে খেলে এবং তারপর কোচ হয় তখন তার মাঠ এবং মাঠের বাইরের অনেক বেশি জ্ঞান থাকে। এবার তার পক্ষেই সম্ভব একটা ম্যাচকে পরিবর্তন করে দেওয়া, যেটার প্রমাণ আমরা সবাই পেয়েছি এবং দেখেছি। তো আমি মনে করি সেই সময় আমরা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম। আর সবচেয়ে বড় কথা, দলে কোচের সিদ্ধান্তই আসল সিদ্ধান্ত… সেখানে তো কোচকে অস্বীকার করে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। আর আমি তো জানি, আমার কোচ ভালো-দক্ষ, তাহলে কেন আমি তাকে নিয়ে অহেতুক আলোচনা করবো।”
উল্লেখ্য, এশিয়ায় মোট ৮টি গ্রুপে ৩৩টি দল বাছাইপর্ব খেলছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম দল হিসেবে এক ম্যাচ হাতে রেখে চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া স্বাগতিক হিসেবে এবং চীন (বর্তমান চ্যাম্পিয়ন), দক্ষিণ কোরিয়া (রানার্সআপ), জাপান (তৃতীয়) সরাসরি চূড়ান্ত পর্বে খেলবে। এই চার দেশের পর সবার আগে যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ এখন পঞ্চম দল হিসেবে চূড়ান্ত পর্বে নাম লিখিয়েছে। আরও সাত গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল চূড়ান্ত পর্বে যোগ দেবে।
বাছাইপর্বে বাংলাদেশের গ্রুপে ছিল পাঁচবারের এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলা মিয়ানমার ছাড়াও তুর্কমেনিস্তান ও বাহরাইন। কেউই হয়তো আশা করেননি, এক ম্যাচ হাতে রেখে এমন ইতিহাস গড়বেন বাংলাদেশের ঋতুপর্ণা চাকমা, তহুরা খাতুমরা। কারণ এর আগে দুইবার বাছাই খেলে সব ম্যাচ হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের। এবার সেই শক্তিশালী মিয়ানমারকে হারিয়ে তারা অস্ট্রেলিয়ার টিকিট নিশ্চিত করেছেন।
গ্রুপের শেষ ম্যাচটি আগামীকাল (শুক্রবার) তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচ জিতলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই চূড়ান্ত পর্বে যাবে তারা।
স্বাআলো/এস