রুহুল আমিন: ট্রাফিক সিগন্যাল বা ফুটওভার ব্রিজের অভাবে যশোরের দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই সড়কের একপাশ থেকে অন্যপাশে চলাচল করতে হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও উচ্চ বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।
বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই প্রধান প্রধান সড়কের পাশে থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সবসময়ে চরম ঝুঁকির মধ্যে চলাচল করছে। প্রতিনিয়ত শহরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুকিতে পড়ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকবৃন্দ।
তবে অভিভাবকরা বলছেন, যশোর শহরের সড়কগুলো আগের থেকে প্রসস্তসহ ফুটপাত তৈরি হলে যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাছাড়াও ফুটপাত দখল করে আছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাছাড়াও সড়কে নেই গতিরোধক ব্যবস্থা। ফলে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচল করে। প্রতিনিয়ত স্কুলগামী বাচ্চারা ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে।
দেখা যায়, যশোর শহরের মধ্যে প্রধান প্রধান সড়ক সংলগ্ন বেশ কয়েকটি স্কুল-বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিটি স্কুলে রয়েছে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী। কয়েকটি স্কুল ঐতিহ্যবাহী ও সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে। আর কয়েকটি স্কুলের বয়স কম হলেও নামে ও যশে তাদেরও কোনো কমতি নেই। নতুন পুরাতন এসব স্কুলের মধ্যে রয়েছে যশোর জিলা স্কুল, যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, সম্মিলনী ইন্সটিটিউশন, যশোর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়, যশোর শিক্ষাবোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অন্ড কলেজ, যশোর কালেক্টরেট স্কুল, সেক্রেটহার্ড মিশনারীজ স্কুল, নব-কিশলয় স্কুল, অক্ষর শিশু শিক্ষালয়, মৌমাছি স্কুল, আব্দুস সামাদ মেমোরিয়াল একাডেমী, সেবাসংঘ বালিকা বিদ্যালয়, পুলিশ লাইন হাইস্কুল, যশোর সরকারি ইন্সটিটিউট প্রাইমারি স্কুল।
এক প্রকার বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা তাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া-আসার সময় রাস্তা পারাপার করে দিচ্ছেন। বেশিরভাগ অভিভাবককে শিক্ষার্থীদের পরাপারের জন্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্কুলে থাকতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য প্রতিটি স্কুলের সামনে ট্রাফিক সিগন্যাল ও ট্রাফিককর্মী রাখার দাবি তুলেছেন সাধারণ অভিভাবকরা।
তবে দেখা যায় কয়েকটি স্কুলের কর্মচারীরা (দারোয়ান/আয়া) স্ব-প্রণোদিত হয়েই শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারে সাহায্য করছেন।
যশোর জিলা স্কুলের ছাত্র অর্নব বলেন, রাস্তায় কোন ট্রাফিক সিগন্যাল বা ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় অনেক ঝুঁকি নিয়ে রাস্তাগুলি পার হতে হয়।
অর্নব আরো জানায় যশোরের কোনো স্কুলের সামনে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারের জন্য নেই ট্রাফিক সিগন্যাল বা সাংকেতিক চিহ্ন। এমনকি কোনো স্কুলের সামনেও নেই কোনো ট্রাফিক কর্মী। যখনই স্কুল শুরু বা ছুটি হয় সেই সময়ে রাস্তা গুলিতে যানজট শুরু হয়ে যায়। যার ফলে প্রতিনিয়ত স্কুলগুলোর সামনে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। কিছুদিন আগেই যশোর জিলা স্কুল থেকে বাচ্চা নিতে আসা বারান্দিপাড়ার একগুন দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।
দুদু বক্স নামে একজন অভিভাবক জানান, তার ছেলে যশোর জিলা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। বাচ্চাকে স্কুলে আসা নেয়ার জন্য প্রতিদিন আসা লাগে। স্কুলের গেটের সামনে নেই ট্রাফিক সিগন্যাল। তাছাড়া দ্রুত গতির মোটরসাইকেল, ইজিবাইক ও রিক্সার কারনে প্রায় প্রায় দুর্ঘটনাও ঘটে যায়। ট্রাফিক সিগন্যাল ও ট্রাফিক কর্মীরা থাকলে বাচ্চারা নিরাপদে রাস্তা পারাপার করতে পারতো।
সুন্দরী বিবি জানান, তার বাচ্চা নবকিশলয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। ব্যস্ততম রাস্তার পাশেই স্কুলটি অবস্থিত। দুর্ঘটনা এড়াতে জরুরীভিত্তিতে এই স্কুলে ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা প্রয়োজন।
কিশোর কুমার জানান, তার একমাত্র মেয়ে যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাচ্চাকে নিয়ে বেশ চিন্তায় থাকতে হয়। স্কুল ছুটির পর মেইনগেটের সামনে বেশ যানজট বাঁধে। ওই সময়ে কোন ট্রাফিকও দায়িত্বে থাকেন না। স্কুলের সামনে ট্রাফিক সিগন্যাল থাকলে সব বাচ্চাদের জন্য উপকার হতো।
যশোর জিলা স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, জিলা স্কুলের সামনে ট্রাফিক সিগন্যাল তো দূরের কথা কোন প্রকার স্প্রীড বেকারও নেই। সেইজন্য প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। সাংকেতিক চিহ্ন ও ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবহার করে দুর্ঘটনা কমানো যেতে পারে।
যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্য জেব্রা ক্রসিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে। জেব্রা ক্রসিংয়ের মাধ্যমে বাচ্চারা নিরাপদে রাস্তা পারাপার করতে পারবে।
যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজ হোসেন বলেন, বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ট্রাফিক সিগন্যাল ও ট্রাফিককর্মী রাখা অত্যান্ত জরুরী। যশোরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অত্যাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুল ছুটির পর শহরের মধ্যে যানজট বেড়ে যায়। সেইজন্য প্রায়ই ছোটবড় দুর্ঘটনা হচ্ছে। সাধারণ মানুষদের সচেতন হতে হবে স্কুলের সামনে দিয়ে গতিবিধি অনুসরণ করে গাড়ি চালাতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নে সবাইকে বাধ্য করতে হবে। ট্রাফিক আইন না মানলে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাহলে সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলবে। বাচ্চারা নিরাপদে পারাপার করতে পারবে।
যশোর জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে আমার তেমন কোনো ধারণা নেই। আগামীতে মাসিক আইন শৃংঙ্খলা মির্টিংয়ে বিষয়টি উপস্থাপন করবো।
স্বাআলো/এস