ঢাকা অফিস: রৌদ্রকরোজ্জ্বল সকালে গান, কবিতা, বর্ণিল সাজসজ্জা আর উৎসবমুখর পরিবেশে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে বাঙালি জাতি বরণ করে নিচ্ছে বাংলা নতুন বছর ১৪৩২।
সোমবার (১ বৈশাখ) পুরনো বছরের ব্যর্থতা ও জীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরে সবার কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনায় দেশজুড়ে উদযাপিত হচ্ছে বাঙালির সর্বজনীন প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ।
সারাদেশে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানে মুখরিত হচ্ছে চারিদিক। এবারের নববর্ষ উদযাপন বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে, কারণ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পূর্ববর্তী সরকারের পতনের পর এটিই প্রথম বর্ষবরণ। এই প্রেক্ষাপটে উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জাতীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যেখানে সকল জাতিসত্তার নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার মাধ্যমে উৎসবকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার প্রয়াস নেয়া হয়েছে।
ঐতিহ্য অনুযায়ী, বর্ষবরণের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ রমনার বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতি অনুষ্ঠান। এবার তাদের ৫৮তম আয়োজনের মূল ভাবনা ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ভৈরবী রাগে আলাপ দিয়ে শুরু হয় প্রায় দুই ঘণ্টার এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা। অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। যদিও এবার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র পরিবর্তে এর নামকরণ করা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। শোভাযাত্রার অন্যতম আকর্ষণ ২০ ফুট উচ্চতার ‘স্বৈরাচারের মুখাকৃতি’ মোটিফটি শনিবার ভোররাতে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দিলেও, চারুকলা অনুষদ জানিয়েছে, শোভাযাত্রা তার বর্ণাঢ্য রূপেই রাজপথে নেমেছে।
বাংলা নববর্ষ উদযাপন পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে এই উৎসব বিপুল উদ্দীপনায় পালিত হতে শুরু করে এবং রমনার বটমূলে ছায়ানটের আয়োজন ১৯৬৭ সাল থেকে এই উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে চারুকলার শোভাযাত্রাসহ বহু সংগঠনের অংশগ্রহণে এটি প্রাণের উৎসবে রূপ নেয়। যদিও প্রাত্যহিক জীবনে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ব্যবহার বেশি, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষক সমাজ চাষাবাদ ও ফসল তোলার ক্ষেত্রে এখনো বাংলা সন অনুসরণ করেন। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ও তাদের আচার-অনুষ্ঠানে বাংলা পঞ্জিকা ব্যবহার করে। তাই নতুন বছরকে ঘিরে মানুষের প্রত্যাশা ও উৎসবের আমেজ বরাবরই থাকে।
রাজধানীর অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে রয়েছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বিসিকের সাথে যৌথ আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী লোক ও কারুশিল্প মেলা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে ‘ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়’ প্রতিপাদ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বেলা তিনটা থেকে চলবে বৈশাখী ব্যান্ড শো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সন্ধ্যা সাতটায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় চীনা কারিগরি দলের পরিবেশনায় থাকছে বর্ণাঢ্য ড্রোন শো। এসব প্রধান আয়োজন ছাড়াও বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক সংগঠন ও আবাসিক ভবনগুলোতে ছোট পরিসরে বর্ষবরণের নানা অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে বিভিন্ন সংগঠন শহরজুড়ে গান ও আবৃত্তি পরিবেশনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে নববর্ষের আনন্দ বার্তা।
স্বাআলো/এস
