স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়া মঞ্চের সভাপতি

জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী: নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার হরণী ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জামসেদুল ইসলাম টুটুলকে একই ইউনিয়নের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী জিয়া মঞ্চের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, জামসেদুল ইসলাম টুটুল হরণী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন। দলীয় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এরই মধ্যে গত ২৮ নভেম্বর হাতিয়া উপজেলা জিয়া মঞ্চের হরণী ইউনিয়ন শাখার ২০ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়, যেখানে জামসেদুল ইসলাম টুটুলকে সভাপতি হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়।

এই নিয়োগের খবরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেন, অতীতে টুটুল বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দমনে ভূমিকা রেখেছিলেন। ক্ষমতার পালাবদলের পর তার এই আকস্মিক দল পরিবর্তন এবং জিয়া মঞ্চের মতো সংগঠনের শীর্ষ পদ পাওয়াকে তারা সন্দেহের চোখে দেখছেন।
তবে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামসেদুল ইসলাম টুটুল তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি দাবি করেন, সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী আমাকে জোর করে স্বেচ্ছাসেবকলীগের পদ দিয়েছিলেন। আমি সেই পদ প্রত্যাখ্যান করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম এবং প্রায় তিন বছর এলাকায় ফিরতে পারিনি। আওয়ামী লীগ আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় এলাকা থেকে বিতাড়িত করে।

টুটুল আরও দাবি করেন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমি হরণী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। জাতীয় নির্বাচনের সময় সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী আমার দুটি দোকান বন্ধ করে দেন। নিরুপায় হয়ে তার কাছে গেলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আমি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাই।” তিনি বলেন, “আমার অনুমতি ছাড়াই হাতে লেখা একটি কাগজে আমাকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল, যা আমি লিখিতভাবে প্রত্যাখ্যান করি এবং এর প্রতিবাদে পদত্যাগ করি। এরপর আমার ওপর হামলা হয় ও দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়, ফলে আমি এলাকা ছাড়ি। আমার ফেসবুক পোস্ট ঘাঁটলেই এর প্রমাণ মিলবে।

এদিকে, হাতিয়া উপজেলা জিয়া মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক রিপন চন্দ্র দাস বলেন, টুটুলকে ২০১৭ সালের দিকে হরণী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের পদে যুক্ত করার বিষয়টি আমাদের জানা ছিলো না। জানার পর আমরা হরণী ইউনিয়ন জিয়া মঞ্চের ওই কমিটি স্থগিত করেছি। তবে এটা সত্য যে, ২০১৮ সাল থেকে টুটুল আমাদের সাথে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।

যোগাযোগ করা হলে নোয়াখালী জেলা জিয়া মঞ্চের আহবায়ক মনির হোসেন বলেন, টুটুল একসময় ছাত্রদল করতেন এবং ২০২০ সাল থেকে ফেসবুকে সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে লিখতেন। তবে তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবকলীগে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা হরণী ইউনিয়নের পুরো কমিটি বাতিল করেছি।

এই ঘটনায় হাতিয়ার স্থানীয় রাজনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা এবং অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। উভয় দলের নেতারাই পুরো বিষয়টিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

স্বাআলো/এস