কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি::
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়রা উপজেলা আহ্বায়ক গোলাম রব্বানীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি এবং সংগঠনের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক অভিযোগ আমলে নিয়ে সংগঠনের খুলনা জেলা কমিটি এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাতে খুলনা জেলার দপ্তর সেলের সদস্য শিহাব সাদনাম রাতুল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি তাসনিম আহমেদ ও সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পির নির্দেশক্রমে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, কেন তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে আগামী সাত দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নানা অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রব্বানী
জানা যায়, গোলাম রব্বানী খুলনার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা শেষ করে কয়রায় ইলেকট্রিক পণ্যের ব্যবসা পরিচালনা করতেন এবং কিছুদিন একটি বেসরকারি পলিটেকনিকে শিক্ষকতা করেছেন। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার দাবি করলেও, স্থানীয় ছাত্রসমাজের সাথে যুক্ত হয়ে দ্রুত প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোশাররফ হোসেন রাতুলের নেতৃত্বে কয়রায় ছাত্র সমন্বয় কার্যক্রম শুরু হলেও কিছুদিনের মধ্যে গোলাম রব্বানী ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে পদলিপ্সায় জড়িয়ে পড়েন। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে গোলাম রব্বানী কয়রায় একক আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা করেন। ২০২৩ সালের বিজয় দিবসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে দাঁড়িয়ে অভিবাদন গ্রহণের দৃশ্য তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কভার ফটোতেও প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়া, চাঁদাবাজি, প্রতিপক্ষকে হয়রানি, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর মতো গুরুতর অভিযোগও তার বিরুদ্ধে উঠেছে।
চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক অপব্যবহারের অভিযোগ
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নৌকা প্রতীকের জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছ থেকে নানা কৌশলে চাঁদা আদায় করতেন গোলাম রব্বানী। ইফতার মাহফিল আয়োজনের নামেও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে, যা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিল এবং সংগঠনের নেতাদের অবস্থান নেওয়ার ফলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হয় জেলা কমিটি।
এছাড়া, জামায়াত-বিএনপি ঘনিষ্ঠতার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি, ২০১৩ সালের জামায়াত-শিবিরের মিছিলে হামলার ঘটনায় কয়রা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন নিরীহ ব্যক্তিকে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে, যেখানে নিহত ব্যক্তির স্ত্রী নিজেই মামলার তালিকায় থাকা আসামিদের চিনতেন না বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন।
সংগঠনের অবস্থান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মহরম হাসান মাহিম বলেন, “কয়রা উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ও অসন্তোষের প্রেক্ষিতে সংগঠন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তাকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। যথাযথ কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কোনো অন্যায়কারীর সঙ্গে আমাদের আপোষ নেই।”