বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ বাতিল করে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ নামে একটি নতুন আইন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
নতুন অধ্যাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকারকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অনলাইন জুয়াও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হয়েছে, যার আওতায় ৯৫ শতাংশ মামলা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, “বাতিল হওয়া ধারাগুলোর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, জাতীয় সংগীত ও পতাকা নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্যের শাস্তির বিধান, মানহানি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো ও মিথ্যা তথ্য প্রচার সংক্রান্ত বিষয়। এইসব ধারায় বহু সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন।”
নতুন অধ্যাদেশে স্পিচ অফেন্স–সম্পর্কিত মাত্র দুটি অপরাধকে শাস্তিযোগ্য হিসেবে রাখা হয়েছে-নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিমূলক কনটেন্ট ও হুমকি এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে সহিংসতা উসকে দেওয়া।
তবে এসব অপরাধের ক্ষেত্রে রক্ষাকবচ হিসেবে আমলি আদালতের অনুমতি এবং মামলার গঠনমূলকতা যাচাই করে দ্রুত বাতিলের সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এসব অপরাধ জামিনযোগ্য এবং কিছু ক্ষেত্রে আপসযোগ্যও করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) ব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত সাইবার অপরাধকেও শাস্তিযোগ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আসিফ নজরুল জানান, “সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের রাখার বিধানও রাখা হয়েছে। কোনো কনটেন্ট অপসারণের ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিতে হবে এবং সেই বিষয়ে জনগণকে জানাতে হবে।”
অধ্যাদেশের খসড়া ২৫ বার পরিবর্তন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সর্বশেষ খসড়া তৈরি করতে সুশীল সমাজের সঙ্গে তিন ঘণ্টা আলোচনা করা হয়েছে।” এখন আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর অধ্যাদেশটি জারি হবে। আশা করা যাচ্ছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই এটি কার্যকর হবে।
এদিন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ–সংক্রান্ত আইনের সংশোধনী এবং দেওয়ানি কার্যবিধির (সিপিসি) সংশোধনী প্রস্তাবও চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।