বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফরের সময় ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে (বিবিসি) একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
এই সাক্ষাৎকারে তিনি দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি, আসন্ন নির্বাচন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। গত ১২ই জুন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের আগে বিবিসির সাংবাদিক রাজিনি বৈদ্যনাথন তার এই সাক্ষাৎকার নেন।
ইংরেজিতে দেয়া সাক্ষাৎকারটির কিছু অংশ বিবিসি বাংলা অনুবাদ করে প্রকাশ করেছে, যেখানে উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি স্পর্শকাতর বিষয়।
নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে
নির্বাচনের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রকৃতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস ব্যাখ্যা করেন যে, অন্তর্ভুক্তিমূলক বলতে কোনো নির্দিষ্ট দলকে নয়, বরং সব মানুষের অংশগ্রহণকে বোঝায়। মানুষ ভোট দিতে পারলেই নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, তবে তাদের কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যার মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণও অন্তর্ভুক্ত। নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর।
সংসদ নির্বাচনে পোস্টার নিষিদ্ধ: ইসি
শেখ হাসিনা ও তার প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে এবং এটি চলমান। সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন হবে এবং তিনি চান শেখ হাসিনা বিচারের মুখোমুখি হোন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে বলে তিনি জানান। শেখ হাসিনার ভারতে থাকা নিয়ে সরাসরি বিরক্তি প্রকাশ না করলেও তিনি বলেন, সমস্যা তার উপস্থিতি নয়, বরং সেখান থেকে তার ভাষণ প্রচার করা।
আওয়ামী লীগ সমর্থকদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে
অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক শত শত আওয়ামী লীগ সমর্থককে গ্রেফতার করার অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস এই তুলনাকে লজ্জাজনক আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, যারা অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তুলনা করেন, তারা বাংলাদেশের বাস্তবতা বোঝেন না।
রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে এসএসএফকে কাজ করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট প্রসঙ্গে
রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস এটিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে তাদের আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। তিনি জানান, তিনি নিজেও রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। অধ্যাপক ইউনূসের মতে, প্রত্যাবাসনই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান এবং রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে একীভূত করা সম্ভব নয়। তিনি এর কারণ হিসেবে স্থানীয় জনগণের বিরূপ মনোভাব এবং বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থনৈতিক ও সামাজিক সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
স্বাআলো/এস